আপনি বর্তমানে দেশের বাইরে কাজ করছেন। মাস গেলে যে বেতন পান তা থেকে কিছু দেশে পাঠান এবং নিজের জন্য খরচ করে যে অর্থ হাতে থাকে তা দিয়ে আপনি এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। আপনি বিশ্বের যেকোনো স্থানেই থাকেন না কেন আপনি এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। আবার দেশে ছুটি নিয়ে যখন আসবেন তখনো বিনিয়োগ করে যেতে পারেন।
কিছু সময় শোনা যায়, দেশের বাইরে থেকে আত্মীয় পরিজন রেখে কঠোর পরিশ্রম করে মাস গেলে যে আয় হয় তার সম্পূর্ণই দেশে নিকটজনদের পাঠিয়ে থাকেন। কিন্তু এই টাকা দেশে সবই খরচ হয়ে যায়। এভাবে পাঁচ বছর বা দশ বছর বা বছরের পর বছর থাকলেও বিদেশ থেকে যখন একবারে চলে আসেন তখন হাতে তেমন কিছুই থাকে না। যদি কিছু জমা থাকত তাহলে ওই টাকা দিয়ে দেশে কিছু করতে পারতেন। আবার কিছু সময় শোনা যায়, জমানোর জন্য যাদের কাছে টাকা পাঠিয়েছিলেন তারা পরে আর ফেরত দেননি। এ ধরনের দুঃখজনক অবস্থা থেকে নিজের অর্জিত অর্থ রক্ষা করতে আপনি এই বন্ডে বিদেশে থেকেই বিনিয়োগ করতে পারেন। এই বন্ডে আপনি যদি বিনিয়োগ করেন তাহলে কয়েকটি সুবিধা আছে । আপনি সবচেয়ে বেশি হারে মুনাফা পাবেন যা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেও পাবেন না।
আরেকটা বড় সুবিধা হলো, আপনি এই বন্ড থেকে ছয় মাস পর পর যে মুনাফা পাবেন তা থেকে কোনো কর
কর্তন করা হবে না। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে ১০% কর কর্তন করে বাকি টাকা প্রদান করা হয় । আর এই বন্ড থেকে যে মুনাফা পাবেন তা থেকে কোনো কর কর্তন করা হবে না। আপনি মুনাফার সম্পূর্ণ টাকাই পেয়ে যাবেন। আপনি দেশের বাইরে থেকে যদি কোনো রেমিট্যান্স পাঠান তাহলে তা সম্পূর্ণ করমুক্ত। এই আয়ের জন্য আপনাকে কোনো কর দিতে হয় না। উপরন্তু, আপনি আপনার পাঠানো রেমিট্যান্স এর ওপর ইনসেনটিভ পেয়ে থাকেন। এখন আপনি দেশে এই পাঠানো টাকা যদি সঞ্চয়পত্র বা কোনো ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখেন তাহলে তা থেকে যে মুনাফা পাবেন তার ওপর কর কর্তন করলে আপনার আয় কমে যাবে। এখন যেহেতু আপনি দেশের বাইরে থাকেন এবং আপনার এই বন্ডে বিনিয়োগ করার সুযোগ আছে তাই আপনি এখানেবিনিয়োগ করে করমুক্ত মুনাফার সুযোগ নিতে পারেন। এতে করে আপনার বিদেশ থেকে অর্জিত আয় এবং এর বিনিয়োগ থেকেও যে আয় তা পুরুটাই করমুক্ত থাকবে।
বৈধ ওয়েজ আর্নার নিজে বা আবেদনপত্রে উল্লিখিত ব্যক্তি বা বাংলাদেশে তার বেনিফিশিয়ারির নামে বাংলাদেশি টাকা/বৈদেশিক মুদ্রায় এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এ ছাড়া বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ ক্রয় করতে পারে।
কত পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন?
আপনি ২৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন। পাঁচ বছর মেয়াদি এই বন্ডে আপনি নিজের নামের পাশাপাশি আপনার স্ত্রী, ছেলে মেয়ে, মা-বাবার নামে বিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে আপনি যত জনের নামেই বিনিয়োগ করেন না কেন সব মিলিয়ে এক কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করতে পারবেন না। যেহেতু আপনি আপনার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, মা-বাবার নামেও আপনার পাঠানো টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন তাই আপনি চাইলে তাদের নামেও এই বন্ডে টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন। আপনি যে দেশে আছেন ওই দেশে থেকে আপনার নামে বন্ড কিনতে যদি সময় না পান বা আপনি যদি দেশে আসতে অনেক দেরি হয় তাহলে আপনি আপনার পরিবারের সদস্যদের এই বন্ডে বিনিয়োগের কথা বতে পারেন।
আবার যারা বাংলাদেশে আছেন, আপনার পরিবারের কেউ যদি দেশের বাইরে থাকেন তাহলে তিনি যে টাকা পাঠিয়েছেন তা অন্য কোনো খাতে বিনিয়োগ না করে এই বন্ডে বিনিয়োগ করুন। এতে করে একদিকে মুনাফা বেশি পাবেন এবং অন্যদিকে এই মুনাফার ওপর কোনো কর দিতে হবে না। সম্পূর্ণ করমুক্ত।
বিনিয়োগের জন্য কোথায় যোগাযোগ করবেন?
বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের তফসিলী ব্যাংকের শাখা, এক্সচেও হাউস, এক্সচেঞ্জ কোম্পানি, বাংলাদেশে যে কোনো তফশিলী ব্যাংকের অথরাইজড ডিলার (AD) শাখা হতে এই বন্ড ক্রয় করতে পারবেন। তাহলে বুঝতেই পারছে, আপনি দেশে এবং বিদেশে যেখান থেকে সুবিধা হয় সেখান থেকেই বিনিয়োগ করতে পারবেন। আপনি যদি বিদেশে থাকেন তখন দেশে টাকা পাঠানোর জন্য যখন ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসে যাবেন তখন একই জায়গা থেকে আপনি এই বন্ড কিনতে পারবেন।
বিনিয়োগ থেকে রিটার্ন কেমন আসবে?
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থেকে সর্বোচ্চ ১১.৭৬% মুনাফা পাওয়া যায়। আর পাঁচ বছর মেয়াদি এই ভরেজ আর্নার বন্ড থেকে ১২% মুনাফা পাওয়া যায় এবং আপনাকে প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর মুনাফা প্রদান করা হবে। তবে আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়তে থাকলে এবং কিছু সীমা অতিক্রম করলে আস্তে আস্তে এই মুনাফার পরিমাণ কমতে থাকবে। নিচ থেকে দেখে নিন বিনিয়োগ ধাপ অনুযায়ী আপনি মুনাফা কত পাবেন।
ক)১৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ১২%;
খ) ১৫,০০,০০১ টাকা থেকে ৩০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ১১%,
গ) ৩০,০০,০০১ টাকা থেকে ৫০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত-১০% এবং
ঘ) ৫০,০০,০০১ টাকা থেকে তদূর্ধ্ব-৯%।
ধরুন, আপনি ২০ লাখ টাকা এই বন্ডে বিনিয়োগ করেছেন। তাহলে আপনি প্রথম ১৫ লাখ টাকার ওপর ১২% এবং অবশিষ্ট ৫ লাখ টাকার ওপর ১১% হিসেবে মুনাফা পাবেন।
ওপরে বিনিয়োগ ধাপ অনুযায়ী যে মুনাফার হার দেওয়া হয়েছে এই বিনিয়োগ দ্বাপ আপনি সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রেও দেখেছেন। ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সর্বোচ্চ হারে মুনাফা পাওয়া যায়। তারপর বিনিয়োগ যত বাড়তে থাকবে আপনার মুনাফার হার তত কমতে থাকবে। তবে আপনি এই বন্ডে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করুন। কারণ, ৩০ লাখ টাকা অতিক্রম করার পর আপনি ১০% হিসেবে মুনাফা পাবেন। কিন্তু আপনি যদি পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন তাহলে ১১.২৮% হিসেবে মুনাফা পাবেন। যদিও পাঁচ বছর মেয়াদি বিনিয়োগের মুনাফা থেকে কর কর্তন করবে তারপরেও আপনার মুনাফা ১০% এর বেশি হবে।
তাই যেই বিষয়টা বারবার গুরুত্ব দিচ্ছি তা হলো, আপনি যেকোনো খাতে বিনিয়োগ করুন না কেন আগে মুনাফার হার এবং কর কর্তনের হার বা ট্যাক্স সুবিধা কেমন তা ভালোভাবে হিসাব করে জেনে নেবেন। এই হিসাবের পর যে খাতে সবচেয়ে বেশি মুনাফা পাবেন ওই খাতেই বিনিয়োগ করবেন। আপনি ইতিমধ্যে জেনেছেন, এই বন্ড থেকে আপনি যে মুনাফা পাবেন তা সম্পূর্ণ কর মুক্ত।
ধরুন, আপনি ১,০০,০০০ টাকা এই বন্ডে বিনিয়োগ করেছেন। তাহলে ছয় মাস পর আপনি মুনাফা পাবেন ৬,০০০ (১,০০,০০০ X ১২% ) / ২ টাকা। যেহেতু বছরে দুইবার আপনি মুনাফা পাবেন তাই সারা বছরের মুনাফাকে ২ দিয়ে ভাগ করেছি। সহজভাবে বলতে গেলে, ১,০০,০০০ টাকায় আপনি প্রতি মাসে ১,০০০ টাকা মুনাফা পাবেন। পাঁচ বছর শেষ হয়ে গেলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে একাধিক মেয়াদের জন্য পুনঃবিনিয়োগ সুবিধা রয়েছে তাই নতুন করে আবার ঝামেলা করতে হবে না। বিনিয়োগ করার পর যদি কোনো কারণে অর্থের প্রয়োজন হয় তাহলে বিনিয়োগকৃত অর্থের বিপরীতে ঋণ নিতে পারবেন। এবং আপনি নমিনিও নিয়োগ করতে পারবেন। কোনো কারণে বন্ড হারিয়ে গেলে, পুড়ে গেলে বা নষ্ট হলে ডুপ্লিকেট বন্ড ইস্যুর সুযোগ রয়েছে এবং এই বন্ডে বিনিয়োগের জন্য এফসি অ্যাকাউন্ট থাকার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।