যে কোম্পানির শেয়ার কেনা হবে, তার বর্তমান আয়, বার্ষিক আয়, নতুন কোনো পরিবর্তন আসছে কি না, কোম্পানির পণ্য সরবরাহ কেমন, নেতৃত্বে কারা আছে, কোম্পানির শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশ গ্রহণ কেমন এবং সবশেষে ওই কোম্পানির পণ্যের বাজারে চাহিদা কেমন আছে। যিনি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী তার প্রথম কাজ হবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির আর্থিক বিবরণ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নেয়া। প্রতিটি কোম্পানি প্রতি বছর বার্ষিক আয়-ব্যয় সংবলিত একটি প্রতিবেদন পেশ করে। ওই প্রতিবেদন সংগ্রহ করে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে হবে।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হলে অব্যশই তাকে বাজারের কিছু টার্মস জানতে হবে। যেমন ইপিএস, ইংরেজিতে এর বিশ্লেষণ হলো আরনিং পার শেয়ার বা প্রতিশেয়ারের বিপরীতে আয়। ডিভিডেন্ড বা লভ্যাংশ। ডিভিডেন্ড ইল্ড, প্রাইস আরনিং রেশিও, নিট এসেট ভ্যালু।
ইপিএস- শেয়ারপ্রতি নিট মুনাফা বুঝায়। যেমন শেয়ারপ্রতি আয় বের করতে হলে কর বাদে কোম্পানির নিট মুনাফাকে মোট সাধারণ শেয়ার দিয়ে ভাগ করতে হবে।
ডিভিডেন্ড- এটি কোম্পানি কর্তৃক প্রতি শেয়ার মূল্যের ভিত্তিতে বিতরণকৃত লভ্যাংশকে বুঝায়।
আরনিং পার রেশিও- এটি কত সময় শেয়ারের অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে তা নির্ণয় করে। যেমন মূল্য – আয় অনুপাত = প্রতি শেয়ারের বর্তমান বাজার, ডিভাইডেড প্রতি শেয়ারের আয় ।
নিট এসেট ভ্যালু- এটি শেয়ারপ্রতি কোম্পানির নিট সম্পদের মূল্য প্রদর্শন করে তথা কোম্পানির শেয়ার প্রকৃত মূলের পরিচয় বের করে নিম্নের পন্থায়।
শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ = (সাধারণ শেয়ার মূলধন +রিজার্ভ+অবণ্টিত লভ্যাংশ)/মোট সাধারণ শেয়ার সংখ্যা
শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই শেয়ারের মূল্য ও আয়ের অনুপাত দেখতে হবে। পিই রেশিও যত কম হয়, বিনিয়োগে ঝুঁকি তত কম থাকে। মূল্য-আয় অনুপাত হচ্ছে একটি কোম্পানির শেয়ার তার আয়ের কতগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে তার একটি পরিমাপ।
এরপর শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য দেখতে হবে। এর সাথে বাজারমূল্যের একটা সামঞ্জস্য থাকা উচিত। যে শেয়ারের সম্পদমূল্য বেশি সে শেয়ার তত শক্তিশালী। শেয়ারপ্রতি আয় যত বেশি হবে ততই ভালো। ইপিএস বেশি হলে বেশি লভ্যাংশ দেওয়ার সুযোগ থাকে। ইপিএস কম হলে লভ্যাংশের সক্ষমতাও কম হয়। এছাড়া মোট শেয়ারের সংখ্যা ও ফ্লোটিং দেখতে হবে। চাহিদা যোগানের সূত্র অনুসারে শেয়ার সংখ্যা কম হলে তার মূল্য বাড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অন্যদিকে শেয়ার সংখ্যা বেশি হলে বাজারে তা অনেক বেশি সহজলভ্য হয়, যার ফলে শেয়ারের মূল্য খুব একটা বাড়ে না। এছাড়া নিয়মিত ভালো অঙ্কের লেনদেন হয় এমন শেয়ার কেনা ভালো। গত ৪-৫ বছরের ট্র্যাক রেকর্ড দেখা যেতে পারে। কী পরিমাণ ডিভিডেন্ড দেয়। কোম্পানি কর্তৃক প্রকাশিত বিগত ৮-৯ মাসের খবর দেখা উচিৎ। যে কোম্পানির শেয়ার কিনবেন সে কোম্পানির গুডউইল ও তার পরিচালকদের সামাজিক ও রাজনৈতিক দিকটাও বিবেচনায় নিতে হবে।
ভালো শেয়ার বলতে কোম্পানির একাউন্স দেখতে হবে। গত কয়েক বছরের লভ্যাংশ দেওয়ার প্রবণতা, কোম্পানির স্পন্সর কারা, কোম্পানির বর্তমান প্রাইজ। লেভেল দেখে বিনিয়োগ করতে হবে। শেয়ারে টাকা লগ্নি করলে মুনাফার সম্ভাবনাও বেশি আবার লোকসানের সম্ভাবনাও বেশি থাকে। এজন্য অর্থলগ্নির ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। তবে কয়েকটি বিষয় খেয়াল করে বিনিয়োগ করলে মুনাফার সম্ভাবনা বেশি। এরমধ্যে যে কোম্পানির সম্পদমূল্য বেশি,
শেয়ারপ্রতি আয় বেশি, পিই রেশিও কম সেসব শেয়ারে বিনিয়োগ নিরাপদ।