টাকা রাখার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হলো ব্যাংক কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের কোন ব্যাংক ভালো, এটি এখন সবার মধ্যে কমন প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে। যেকোন ব্যাংকেই চাইলে ভালো বলা যায় না, সেরাদের সেরা হতে গেলে কিছু নির্দেশক বা প্যারামিটার মানতে হয়।
ব্যাংক হচ্ছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যারা সারপ্লাস ইউনিট অর্থাৎ যাদের কাছে টাকা রয়েছে তাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করা বা ডিপোজিট কালেকশন করে ডিফিসিটি ইউনিটকে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করা, আর নির্দিষ্ট সময় পর মুনাফা সহ মুল টাকা সারপ্লাস ইউনিটের কাছে পৌছে দেওয়া।
ভালো কোন ব্যাংকটি জানতে হলে কিছু বিষয় আপনাকে জানতে হবে, যা অনুসরণ করে আপনি ভালো ব্যাংক নির্বাচন করতে পারবেন নিজেই।
এক নাম্বার কোন ব্যাংকে এডিআর রেশিওটা ভালো ? এডিআর রেশিওটা ভালো বলতে আমরা কোনটা বোঝাবো ? এটা ভালোর একটা লিমিট আছে। এডিয়ার রেশিওটা কি ? এডিয়ার রেশিওটা হচ্ছে লোন ডিপোজিট রেশিও অর্থাৎ এই যে সারপ্লাস ইউনিটের কাছ থেকে ব্যাংক যে ডিপোজিট কালেকশান করলো এ থেকে কত টাকা পর্যন্ত ব্যাংক লোন দিতে পারবেন ? প্রাইভেট কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো সাধারনত ৮২% পর্যন্ত লোন দিতে পারে। আর যারা ইসলামী ব্যাংক আসছে তাঁরা ৯০% পার্সেন্ট পর্যন্ত লোন দিতে পারে ডিপোজিটের।
এখন কোন কোন ব্যাংক অনেক সময় বেশি লোন দিয়ে ফেলে। যখন বেশি দিয়ে ফেলবে তখন কি লিকুইডিটি ক্রাইসিসে পরবে, ফলে সেই ব্যাঙ্কটা খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যায়। ফলে যারা বেশি লোন দিয়ে ফেলে তাঁরা ভালো না। আবার যারা কম লোন দিচ্ছে, তখন তাদের ইনকামটাও কমে আসবে, ফলে সেই ব্যাংকটিও ভালো না।
যারা দেখা যাচ্ছে ৭০% থেকে ৮০% মধ্যে লোন দিচ্ছে তাহলে আমরা বুঝে নেবো সেই ব্যাংকটা ভালো একটি ব্যাংক।
এই এডিআর রেশিও আমরা কোথায় পাবো? প্রত্যেক ব্যাংকে তিন মাস পরপর তাদের ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টটা প্রকাশ করে, সেই রিপোর্টটা দেখে বুঝে নিতে পারবেন যে কোন ব্যাংকের এলডিআর রেশিওটা ভালো
দুই নাম্বার দেখতে হবে কোন ব্যাংকের লোন ক্লাসিফিকেশনটা বেশি, আর কোন ব্যাংকে লোন ক্লাসিফিকেশনটা কম বা নন পারফর্মিং লোন আমরা যেটাকে বলি।
যারা আমাদের লোন দেয়, এই সকল ব্যাংক লোন দেওয়ার পরে লোনের একটা অংশ খারাপ লোনে পরিবর্তন হয়ে যায়। এই যে আমরা এখন বিভিন্ন ব্যাংকের নাম শুনছি, যারা তারল্য সংকটে চলছে, এই ব্যাংকের টাকা তুলে নিয়েছে কয়েকটি গ্রুপ। অর্থাৎ তাঁরা খারাপ লোন দিয়ে ফেলেছে বেশি। এই যে খারাপ লোন দেওয়ার ফলে কি হচ্ছে ? লোনের অবস্থা ও ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ক্লাসিফিকেশানটা বেড়ে যাচ্ছে, আর ক্ল্যাসিফিকেশান বেড়ে গেলে কি হবে ? আপনার টাকাটা অরক্ষিত হয়ে যাবে।
তাই লোন ক্লাসিফিকেশান রেশিও এর গুরুত্ব বিবেচনা করতে হবে। যে ব্যাংকের লোন ক্লাসিফিকেশন রেশিওটা খুবই কম, সেক্ষেত্রে বুঝবেন ব্যাংকটি ভাল
তিন নাম্বার ব্যাংকের পরিচালনা বা ম্যানেজমেন্টে করা আছে বা বোর্ডে কারা আছে? পরিচালনা বোর্ডের সদস্য কারা ?
আপনি যখন একটা পণ্য কিনতে যান, আপনি কি করেন ? যে ভালো ব্র্যান্ডের পণ্য কিনেন ? আপনি যখন পন্য কিনতে যান তখন তেল কিনতে গেলে এই ব্র্যান্ডের দাও, টুথপেস্ট কিনতে গেলে ঐ ব্র্যান্ডের দাও। তাহলে কি আপনি ভালো ব্র্যান্ড খুঁজেন। আপনি দেখবেন যে এই বা ঔ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডে কারা আছে ? সেই মানুষগুলো কেমন ? তাদের যদি ব্যবসায়িক সুনাম ভালো হয় তাহলে তাদের ব্যাংকটা অবশ্যই ভালো হবে।
আর যদি দেখেন যে পরিচালনা বোর্ডে কোন চিটার বাটপার বসে আছে, তাহলে কি সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা আপনিই ভাল জানেন।
এটা একদম সহজে বুঝতে প্রথমেই যাবেন ঐ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে যাবেন, দেখবেন বোর্ড অফ ডিরেক্টরসে কারা কারা আছে ? দেখবেন ভালো মানুষ আছে নাকি খারাপ মানুষ আছে।
চার নাম্বার, যারা শেয়ার বাজনেস করে তারা কিন্তু অনেক ক্যালকুলেশান করে শেয়ার কিনে থাকে। শেয়ার প্রাইসটা নরমালি কি হয় ? যে কোম্পানির অবস্থান ভালো – তার শেয়ার প্রাইসটা বেশি হয়, আর জি কোম্পানির অবস্থান খারাপ তার শেয়ার প্রাইসটা কম হয়। এজন্য দেখতে হবে যে এই বা ঐ ব্যাংকের শেয়ার প্রাইজ কত ?
আপনি দেখবেন যে কোন ব্যাংকের শেয়ার প্রাইজ হয়ে বিশ টাকার ট হয়ে আছে দশ টাকা। কোন ব্যাংকের দশ টাকার শেয়ার প্রাইজ পাঁচ টাকা বা ছয় টাকা হয়ে আছে। যে ব্যাংকের শেয়ার প্রাইস দশ টাকার শেয়ার বিশ টাকা হয়ে আছে তুলনামূলক ভাল সেই ব্যাংকে টাকা রাখবেন।
পাঁচ নাম্বার এনএভি বা নেট অ্যাসেট ভেল্যু । কোন ব্যাংকের নেট অ্যাসেট ভেল্যু বেশি, যে ব্যাংকের নেট অ্যাসেট ভ্যালু বেশি সে ব্যাংক সেরা হতে বাধ্য। যে ব্যাংকের নেট অ্যাসেট ভ্যালু বেশি সেখানে টাকা রাখবেন।
প্রত্যেক ছয় মাস পর পর ব্যাংক তাঁর আর্থিক বিবরণী পত্রিকায় প্রকাশ করে থাকে পত্রিকা থেকে নেট অ্যাসেট ভেল্যু দেখে নিতে পারেন।
ছয় নাম্বার লেন্থ অফ সার্ভিস, যে ব্যাংকে টাকা রাখছেন এই ব্যাংক কতদিন মার্কেটে ব্যবসা করছে ? কোনো ব্যাংক আছে দেখবেন ৫০ বছর বা ৭০ বছর বা কোন ব্যাংক ৮০ বছর হল সুনামের সহিত ব্যবসা করে আসছে। তাহলে যে ব্যাংক সুনামের সাথে ব্যবসা করতে পারে, আশা করা যায় স আগামী দিনগুলোও ভালোভাবে সুনামের সাথে ব্যবসা করতে পারবে।
আর যে সকল ব্যাংক নতুন এসেছে বা তুলনামূলক তাদের চেয়ে কম অভিজ্ঞতা তাদের ডিফল্ট হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্যই পুরাতন ব্যাংগুলার চেয়ে বেশি থাকবে, তাই বলে নতুন সব ব্যাংকগুলো মন্দ নয়।এজন্য অবশ্যই ব্যাংকের লেন্থ অফ সার্ভিসটা বিবেচনায় রাখতে পারেন।
যে সে ব্যাংকে টাকা রাখলে সাময়িক সমস্যা হতে পারে চাহিদামত আমানত পেতে, যা বর্তমানে বিভিন্ন টিভি মিডিয়া ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় আসছে। তবে ব্যাংক দেউলিয়া হবার সম্ভাবনা নেই, সর্বোচ্চ হলে একীভূত হবে।
সাত নাম্বার লিকুইডিটি, কোন কোন ব্যাংক লিমিটের বেশি ইন্টারেস্ট দিচ্ছে, আপনি হয়তো চমকপদ ইন্টারেস্ট রেট দেখে ঝাঁপিয়ে পড়লেন, ওই ব্যাংকে টাকা রাখতে। বর্তমানে ৮% থেকে ১১% ইন্টারেস্ট রেট বা এর আশেপাশের রেট স্বাভাবিক বিষয়। আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে লিকুইডিটি ক্রাইসিস আছে কিনা, কেন এত টাকা ইন্টারেস্ট দিচ্ছে?
আট নাম্বার ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং কেমন ? আমরা জানি প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট রেটিং এখন প্রকাশ করতে হয়। ক্রেডিট রেটিং দ্বারা স্ট্রং নাকি দুর্বল বিভিন্ন রেটিং হয় যেমন কোনটা মার্জিনাল রেশিও, কোনটা আপনার সুপারিওর রেশিও, কোনটা গুড ইত্যাদি।
রেশিও তারা ব্যাংকের ফাইনান্সিয়াল পজিশনটা প্রকাশ করে। এটা অবশ্যই এক্সটার্নাল একটা রেটিং কোম্পানি আছে তাদেরকে দিয়ে করাইতে হয়। তবে বর্তমানে কোন কোন প্রতিষ্ঠান উত্তর দক্ষিণা দিয়ে এই রেটিং করে নেয়। সে ক্ষেত্রে দেখতে হবে রেটিং টা কোন কোম্পানি দিয়েছে, কোম্পানির মধ্যে আবার ভাগ আছে – যদি ভালো কোন কোম্পানি রেটিং দেয় সেক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে ধরে নিতে পারেন এটি ভালোর মধ্যেই পড়বে।