ব্যাংকের চেয়ে বেশি লাভ মুনাফার রাজা পরিবার সঞ্চয়পত্র । পরিবার সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম ২০২৩

পরিবার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে তুলনামূলক বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১১.০৪% এবং পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ১১.২৮%। আর পরিবার সঞ্চয়পত্র থেকে ১১.৫২% মুনাফা পাওয়া যায়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনি যে বিনিয়োগ করেছেন তার ওপর মাসিক ভিত্তিতে ১১.৫২% হিসেবে মুনাফা পাবেন। তবে পরিবার সঞ্চয়পত্রে সকল শ্রেণি ও পেশার বাংলাদেশি নাগরিক বিনিয়োগ করতে পারেন না।


নিচের তিন ধরনের ব্যক্তি কেবলমাত্র পরিবার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন।
(ক) ১৮ ও তদূর্ধ্ব বয়সের যে কোনো বাংলাদেশি মহিলা;
(খ) যে কোনো বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী পুরুষ ও মহিলা;
(গ) ৬৫ ও তদূর্ধ্ব যে কোনো বাংলাদেশি পুরুষ নাগরিক।

আপনি যদি ওপরে উল্লেখিত যেকোনো একটি ক্যাটাগরিতে পরেন তাহলে এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন।


এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কী আপনার জন্য উপযুক্ত?
প্রথম বিবেচনার বিষয় হলো আপনার কাছে যে বিনিয়োগযোগ্য অর্থ আছে তা থেকে কী প্রতি মাসে মুনাফা পেতে চান? যদি এর উত্তর হ্যাঁ হয় তাহলে পরিবার সঞ্চয়পত্র আপনার বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে খুবই উপযুক্ত । কারণ আপনি অন্যান্য সঞ্চয়পত্রের তুলনায় সবচেয়ে বেশি মুনাফা পাচ্ছেন। প্রতি মাসে সংসার চালিয়ে আপনার কাছে কিছু টাকা রয়ে যায়। এই টাকা সঞ্চয় করে করে এখন আপনার কাছে ভালো একটা অঙ্ক জমা হয়েছে। আপনি চাচ্ছেন এমন একটা খাতে এই সঞ্চয় করা টাকা বিনিয়োগ করতে যেখান থেকে নিয়মিত একটা আয় হবে যা দিয়ে আপনি নিজের, পরিবারের এবং ছেলেমেয়ের চাহিদামতো খরচ করতে পারেন। এই চিন্তা যদি করে থাকেন তাহলে আপনি এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন।

 

আবার আপনি বিয়ের সময় দেনমোহর হিসেবে যে নগদ টাকা পেয়েছেন তাও আপনি এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন। এবং এই বিনিয়োগ থেকে প্রতি মাসে যে আয় হবে তা দিয়ে আপনার হাত খরচ এবং অন্যান্য দরকারি কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে আপনি যদি পুরুষ হন এবং প্রতি মাসে আপনার বিনিয়োগ থেকে ভালো রিটার্ন পেতে চান তাহলেও পরিবার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনি আপনার স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। তাহলে আপনি তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি মুনাফা পাবেন। এবং এই মুনাফা দিয়ে আপনি যেকোনো কাজ করতে পারেন।


তবে ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে পুরুষ নাগরিকও পরিবার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারবেন। আপনার বয়স যদি ৬৫-র বেশি হয় এবং চাকরি থেকে অবসর নিয়ে যে টাকা পেয়েছেন তা এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন। এতে করে আপনি অবসরকালীন সময়ে প্রতি মাসে ভালো একটি রিটার্ন পাবেন যা দিয়ে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রেও অন্যান্য সঞ্চয়পত্রের মতো বিনিয়োগের ঊর্ধ্ব সীমা রয়েছে।


কত পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন?
আপনি ১০,০০০ টাকা থেকে যেকোনো পরিমাণ টাকার জন্য বিনিয়োগ করতে পারবেন। এই সঞ্চয়পত্রে পাঁচ বছর মেয়াদি হয়ে থাকে এবং একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্রয় করা যাবে। যৌথ নামে কেনার সুযোগ নেই। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পরিবার সঞ্চয়পত্র, এই তিন ধরনের সঞ্চয়পত্রে সমন্বিতভাবে একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা অথবা যুগ্ম নামে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন।


ধরুন, আপনি পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে ১০ লাখ টাকা, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তাহলে আপনি পরিবার সঞ্চয়পত্রে বাকি ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে সবচেয়ে উত্তম হয় আপনি যদি প্রতিটি সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার নিচে বিনিয়োগ করেন। কারণ, লক্ষ্য করুন তিনটি সঞ্চয়পত্রেই ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে সর্বোচ্চ মুনাফা পাওয়া যায়। তারপর মুনাফার হার ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। এভাবে প্ল্যান করে আপনি যদি বিনিয়োগ করেন তাহলে আপনার বিনিয়োগ থেকে সর্বোচ্চ রিটার্ন অর্জন করতে পারবেন । কারণ, আমরা সবচেয়ে বেশি রিটার্ন পাওয়ার উদ্দেশ্যে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করছি।

 

বিনিয়োগ থেকে রিটার্ন কেমন আসবে?
পাঁচ বছর মেয়াদি এই সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ সীমা অনুযায়ী তিনটি মুনাফার হার রয়েছে। মাসিক ভিত্তিতে আপনি নিচের হার অনুযায়ী মুনাফা পাবেন। নিচে থেকে বিনিয়োগের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে মুনাফার হার দেখে নিন।

ক) ১৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ১১.৫২%
খ) ১৫,০০,০০১ টাকা থেকে ৩০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ১০.৫০%
গ) ৩০,০০,০০১ টাকা থেকে তদূর্ধ্ব-৯.৫০%

উল্লেখ্য, ওপরে উল্লেখিত হারে আপনি প্রথম মাস থেকেই মুনাফা পেতে থাকবেন এবং এভাবে আপনি পাঁচ বছর পেয়ে যাবেন।কিন্তু কোনো কারণে যদি আপনি পাঁচ বছরের আগে নগদায়ন করেন তাহলে সঞ্চয়পত্রে উল্লেখিত হ্রাসকৃত হারে মুনাফা পাবেন এবং অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধিত হয়ে থাকলে তা মূল টাকা হতে কর্তন করে সমন্বয়পূর্বক অবশিষ্ট মূল টাকা পরিশোধ করা হবে।


সাধারণ বিনিয়োগকারী কেমন রিটার্ন পাবেন?
আপনি গত দুইটি সঞ্চয়পত্রের আলোচনা থেকে জেনেছেন, সাধারণ বিনিয়োগকারী বলতে যিনি করদাতা নন, অর্থাৎ যিনি ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করেন না এমন বিনিয়োগকারী । আপনি যদি সাধারণ বিনিয়োগকারী হোন তাহলে আপনি কেমন রিটার্ন পাবেন ?

এখানে ১,০০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করলে এক বছর পর কত রিটার্ন আসবে তা আমরা এবার দেখব। ধরে নিচ্ছি আপনি পূর্ণ মেয়াদে আপনার সঞ্চয়পত্র রাখবেন। এবং আপনি ১,০০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তাহলে আপনি প্রতি মাসে ১১.৫২% হিসেবে মুনাফা পাবেন।

প্রতি মাসে মুনাফার পরিমাণ (১,০০,০০০ X ১১.৫২%)/১২= ৯৬০ টাকা। যেহেতু বছরে ১২ মাসে জুড়েই মুনাফা পাবেন তাই সারা বছরের মুনাফাকে ১২ দিয়ে ভাগ করে এক মাসের মুনাফা বের করেছি।
কর কর্তন করবে (৯৬০ X ১০%) = ৯৬ টাকা।
কর কর্তনের পর আপনি পাবেন (৯৬০-৯৬) = ৮৬৪ টাকা।
তাহলে আপনি এক বছরে কর কর্তনের পর মোট মুনাফা পাবেন (৮৬৪ X ১২) = ১০,৩৬৮ টাকা।
আর এক বছরে মুনাফা থেকে কর কর্তন করবে (৯৬ × ১২) = ১,১৫২ টাকা।


করদাতা কেমন রিটার্ন পাবেন?
সাধারণ বিনিয়োগকারীর তুলনায় কর প্রদানকারী সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থেকে রিটার্ন বেশি পান। যেই বছর করদাতা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করবেন ওই বছর রিটার্নের পরিমাণ বেশি। এই রিটার্নটা দুই দিক থেকে হতে পারে। একটি হলো কর রেয়াত এবং আরেকটি হলো, কোনো করদাতা যদি ১০% এর চেয়ে বেশি হারে কর দেন তাহলে তিনি চূড়ান্ত কর হিসেবে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর ১০% হিসেবেই কর দিয়ে থাকেন।


একজন করদাতার যদি ৯ লাখ টাকা করযোগ্য আয় থাকে তাহলে তিনি কীভাবে চূড়ান্ত কর এর সুবিধা পেয়ে থাকেন। আপনার কত টাকা ট্যাক্স সেভ হলো। যাই হোক, ওপরের উদাহরণ থেকে জেনেছেন আপনি ১,০০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করে এক বছর পর ১০% কর কর্তনের পর ১০,৩৬৮ টাকা পাবেন। আর আপনি যেহেতু করদাতা তাই আপনি যে ১,০০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করেছেন তা বিনিয়োগ ভাতা হিসেবে দেখাতে পারবেন। আয়কর আইনে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কর রেয়াত সুবিধার জন্য বিবেচনা করা হয়। তাহলে আপনি যেই বছর বিনিয়োগ করেছেন শুধুমাত্র ওই বছরই এই ১,০০,০০০ টাকার ওপর ১৫% হিসেবে কর রেয়াত পাবেন। এই ১৫,০০০ টাকা আপনার করদায় থেকে বাদ যাবে। তাহলে এখানে আপনার ১৫,০০০ টাকা কর হ্রাস পেল।


একদিকে আপনি বিনিয়োগ করে প্রথম বছর ১০.৩৬৮ টাকা পেয়েছেন। আর অন্যদিকে কর রেয়াত সুবিধা পেয়েছেন ১৫,০০০ টাকা। তাহলে আপনার মোট রিটার্ন হলো ২৫,৩৬৮ (১০,৩৬৮ + ১৫,০০০) টাকা। বুঝতে পারছেন করদাতার জন্য সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ খুবই লাভজনক। তবে আপনি যদি তিন বছরের আগে এই বিনিয়োগকৃত টাকা নগদায়ন করেন তাহলে যে বছর নগদায়ন করেছেন ওই বছর যে ১৫,০০০ টাকা আপনি কর রেয়াত সুবিধা নিয়েছিলেন তা যোগ হয়ে যাবে। অর্থাৎ আপনাকে ১৫,০০০ টাকা কর রেয়াত সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে। তাই কর সুবিধা বহাল রাখার জন্য আপনাকে পাঁচ বছর এই সঞ্চয়পত্র ঘরে রাখতে হবে।


কিছু সতর্কতা
সঞ্চয়পত্রে যেকোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে। তাই আপনার মুনফার পরিমাণও কমতে বা বাড়তে পারে। ট্যাক্স সুবিধাও যেকোনো সময় কমতে বা বাড়তে পারে। তাই বিনিয়োগের সময় এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে নেবেন। বইটিতে যেভাবে মুনাফা এবং ট্যাক্স সুবিধা গণনা দেখানো হয়েছে আপনি ঠিক একইভাবে শুধু মুনাফার হার ও ট্যাক্স হার পরিবর্তন করে গণনা করে নেবেন। তাহলে আপনি বিনিয়োগ থেকে রিটার্ন পেয়ে যাবেন।

 

RELATED WORD : সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম ২০২৩, পরিবার সঞ্চয়পত্রে কত টাকা লাভ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, paribarik sanchayapatra, সঞ্চয়পত্র হলাল নাকি হারাম, পরিবার সঞ্চয়পত্র উৎসে কর,পরিবার সঞ্চয়পত্র, সঞ্চয়পত্রের ফরম, সঞ্চয়পত্র কেনার নতুন নিয়ম, fdr, dps, national savings, ব্যাংক দেওলিয়া হলে সঞ্চয়পত্রের টাকার কি হবে, পোস্ট অফিস সঞ্চয়পত্র ২০২৩, ১ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রে কত টাকা লাভ, sanchayapatra, sanchayapatra interest rate 2023, পরিবার সঞ্চয়পত্র কত লাভ, sonchoy porto 2023

error: Content is protected !!