সঞ্চয়পত্র ভেঙ্গে নতুন রেটে রাখলে তা লাভজনক হবে কিনা ? সঞ্চয়পত্রের নতুন রেট বৃদ্ধির সার্কুলারে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, নতুন রেট ১ লা জানুয়ারী ২০২৫ হতে যারা কিনবেন বা পূনঃবিনিয়োগ করবেন শুধু তারা পাবেন, যারা এর আগে কিনেছেন তারা আগের রেটেই পাবেন। এতে স্পষ্টতই পুরানো বিনিয়োগকারীরা তুলনামুলক লাভ কম পাবে ফলে পুরানো গ্রাহকরা কিছুটা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ফলে অনেকে পুরানো সঞ্চয়পত্র ভেঙ্গে নতুন করে রাখতে চাচ্ছেন বেশি মুনাফা পাওয়ার আশাতে। সঞ্চয়পত্র ভেঙ্গে নতুন করে করলে লাভবান হবেন কি হবেন না তা নির্ভর করবে আপনি কোন সময় সঞ্চয়পত্রটি ভাঙ্গছেন তার উপর !
সঞ্চয়পত্র প্রি-মেচুরিটি ভাঙ্গতে হলে বছরের “রাউন্ড ফিগারে” ভাঙ্গতে হয় তাতে লাভ হয়। যেমন একজাক্টলি ১ বছর, ২ বছর, ৩ বছর, ৪ বছর পর এভাবে ভাঙ্গতে হবে তাহলে লস সর্বনিম্ন হবে। বছরের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে ভাঙ্গলে বেশি লস হবে কারণ সঞ্চয়পত্রের লাভ দেয়া হয় বছরভিত্তিক! যদি ২ বছর ৯ মাসে কোন সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গেন তাহলে এডজাস্টের সময় ২ বছরের রেটে লাভ পাবেন আর অতিরিক্ত ৯ মাসের লাভ ট্যাক্সসহ কেটে রাখা হবে!
বিষয়টি উদাহরণসহ লিখলে সকলের সুবিধা হবে
মনে করি, ১ লক্ষ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র ২ বছর পূর্ণ হয়েছে এখন ভেঙ্গে নতুন করে করবো তাতে লাভ না ক্ষতি হবে?
সঞ্চয়পত্রটি এখন ভাঙ্গলে পাবো ৯৬৯৬০ টাকা
আরো ৩ বছর রাখলে পেতাম মোট= ৯১২*৩৬=৩২৮৩২ টাকা (৫ বছর সময়কাল ধরে হিসাব)
নতুন রেটে ৩ বছরে পাবো: ৯৮৯*৩৬=৩৫৬০৪ টাকা
লাভ হলোঃ ৩৫৬০৪-৩২৮৩২= ২৭৭২ টাকা
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে লাভ হয়নি, ১ লক্ষ টাকা নতুন করে রাখতে হলে প্রাপ্ত ৯৬,৯৬০ টাকার সাথে আর ৩০৪০ টাকা যোগ করে রাখতে হবে।
তাহলে তাহলে প্রকৃতপক্ষে লস হলোঃ ৩০৪০-২৭৭২= ২৬৮ টাকা
আপাত দৃষ্টিতে লাভজনক মনে হলেও হিসাব করে দেখা গেলো সর্বোচ্চ সতর্কতা (বছরের রাউন্ড ফিগার) নিয়ে ভাঙ্গার পরও আপনার লস হচ্ছে আর ইচ্ছামত অসময়ে ভাঙ্গলে লস অনেক বেশি হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না! তাই বলা যেতে পারে-
১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যাদের সঞ্চয়পত্র আছে তারা ভেঙ্গে নতুন করে করলে লাভ হবে না বরং লস হবে। তবে যাদের ১৫- ৩০ লক্ষ টাকার সিলিং পর্যন্ত কেনা সেগুলো ভেঙ্গে নতুন রেটে কিনলে কিছুটা লাভবান হবেন ! তবে সেটা সমান্য ! ৩০ বা তদুর্দ্ধ সিলিং এর সঞ্চয়পত্রগুলো ভেঙ্গে নতুন করে করলে তুলনামুলক লাভবান হবেন। এটা হচ্ছে মুলত আগের রেটে বেশি বিনিয়োগকারীদের মুনাফার পার্থক্য বেশি হওয়াতে তাই উপরের হিসাব সিলিং অনুসারে বের করলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
ভাঙ্গানো সিদ্ধান্তের জন্য নিম্নলিখিত ফ্যাক্টরগুলো বিবেচনাতে রাখুন
১। চলতি জানুয়ারী হতে জুন এর ভিতর যে মাসে সঞ্চয়পত্রের বয়স পূর্ণবছর (রাউন্ড ফিগার) হবে সে মাসে ভেঙ্গে নতুন করে করতে হবে।
২। ডিসেম্বরে যারা কিনেছেন বা পূণঃবিনিয়োগ করেছেন কিন্তু কোন মুনাফা পাননি তারা ভেঙ্গে করতে পারেন।
৩। সঞ্চয়পত্র কিন্তু আংশিক নগদায়ন হয়না তাই সিলিং বেশি বলেই সব ভেঙ্গে ফেলবেন না।
৪। সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গানোর টাকা ১০ লাখের বেশি একাউন্টে জমা হলে কিন্তু আবগরী শুল্ক ৩ হাজার টাকা কেটে নিবে। (বিধি মোতাবেক) সেটাও হিসাবে রাখবেন।
সর্বশেষ, টাকা আপনার সিন্ধান্ত আপনার, আবেগের বসে, হিসাব না করে না বুঝে অন্যের কথাতে প্ররোচিত হয়ে সঞ্চয়পত্র ভেঙ্গে ফেলবেনা তাতে লাভের চেয়ে লস বেশি হয়ে যেতে পারে।
