সরকারি প্রাইজবন্ড ১০০ টাকায় ৬ লাখ টাকা জিতে নিন । প্রাইজবন্ড কি প্রাইজবন্ডের নিয়ম কানুন বিস্তারিত

আপনি যদি প্রাইজ নাও পান তাতেও কোনো ক্ষতি নেই কারণ আপনি যেকোনো সময় চাইলেই নগদায়ন করতে পারবেন। যখন একটা ভালো অঙ্ক জমে যাবে তখন আপনি যদি নিয়মিত মুনাফা পেতে চান তাহলে জমানো প্রাইজ বন্ড ভেঙে সঞ্চয়পত্র বা অন্য যেকোনো খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন। দেশের বাইরে ব্যাংকের কিছু অ্যাপ আছে খরচের পর যদি খুচরা কিছু অর্থ থেকে যায় তাহলে আলাদা করে রাখা যায়। এভাবে আলাদা করে রাখতে রাখতে দেখা যায় ভালো একটা অঙ্ক জমে যায়। আমাদের দেশে যেহেতু এই ধরনের ব্যবস্থা এখনো আসেনি এবং বেশির ভাগ খরচ এখনো নগদে করি সে ক্ষেত্রে আপনি দিন শেষে বা সপ্তাহে বাজার শেষে খুচরা যে টাকা রয়ে যাবে তা আলাদা করে রাখুন। মাস শেষে এভাবে যে টাকা জমবে তা দিয়ে প্রাইজ বন্ড কিনে রাখুন।


আপনি যদি এখন ছাত্র হন এবং পড়ার পাশাপাশি মাঝে মধ্যে যদি হাতে কিছু টাকা জমা হয়ে যায় তাহলে আপনি এই অনিয়মিত টাকা দিয়ে প্রাইজ বন্ড কিনে রাখতে পারেন। ব্যাংকে যদি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন তাহলে তা থেকে যে মুনাফা পাবেন তা নগণ্য হতে পারে বা আপনি যে টাকা মাঝেমধ্যে জমা রাখবেন তা থেকে যে মুনাফা পাবেন তার থেকে দেখা যাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা খরচ বেশি। জমানো টাকা কমে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আপনি প্রাইজ বন্ড কিনে রাখতে পারেন। কারণ, প্রাইজ বন্ড কিনতে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের দরকার নেই। এভাবে আপনি জমাতে থাকলে পড়া শেষে দেখবেন ভালো একটা টাকা জমেছে এবং পড়া শেষে যদি নিজেই কিছু করতে চান তাহলে তা শুরু করতে পারছেন। আর যদি ভাগ্যে পুরস্কার লেগে যায় তাহলেতো খুবই ভালো।


যাদের আয় এবং ব্যয় প্রায় সমান সমান, দেখা যায় কোনো মাস গেলে কিছু টাকা থাকে আবার কোনো মাসে টাকা থাকে না তারা এই দুইটি খাতে এই ক্ষুদ্র সঞ্চয় রাখতে পারেন। একটি প্রাইজ বন্ড এবং আরেকটি ডাকঘর সাধারণ হিসাব।


আপনি যদি ডাকঘর সাধারণ হিসাবে আপনার এই ক্ষুদ্র এবং অনিয়মিত টাকা রাখেন তাহলে মাস শেষে যে টাকা জমেছে তার ওপর ৭.৫% হিসেবে মুনাফা পাবেন। এবং এই মুনাফা থেকে ১৫% কর কর্তন করবে। তবে করদাতা বিনিয়োগকারীর ক্ষেত্রে এই কর কর্তন ১০%। তাহলে আপনি ভেবে দেখুন যে পরিমাণ টাকা জমবে তা থেকে আপনি খুবই কম মুনাফা পাবেন এবং এ থেকে আবার কর কর্তন করবে।


এ জন্য আপনি প্রথমে এই ক্ষুদ্র এবং অনিয়মিত টাকা দিয়ে প্রাইজ বন্ড কিনুন। যখনই টাকা জমবে তখনই আপনি ব্যাংক বা ডাকঘর থেকে প্রাইজ বন্ড কিনে জমাতে থাকুন এবং তিন মাস অন্তর অন্তর ড্র এর সময় মিলিয়ে দেখুন। যদি ভাগ্যে থাকে তাহলে ভালো একটা অঙ্ক পেয়ে যাবেন।


যদি না পান তাহলে আপনার টাকাতো জমছেই। এভাবে প্রাইজ বন্ডে জমাতে জমাতে যখন ভালো একটা অঙ্ক হবে তখন আপনি চাইলে ডাকঘর সাধারণ হিসাবে রাখতে পারেন বা কোনো ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাবে এই টাকা রাখতে পারেন। কিন্তু আপনি ডাকঘরে রাখলে যে ৭.৫% করে মুনাফা পেতেন এই হারে আপনি কোনো ব্যাংক থেকে মুনাফা পাবেন না। তাই আপনি যদি প্রাইজ বন্ডের টাকা নগদায়ন করে নিয়মিত মুনাফা পেতে চান তাহলে প্রথমে ডাকঘরে রাখুন এবং পরে ডাকঘরেই মেয়াদি হিসাবে রাখুন। এভাবে টাকা জমতে থাকলে পরে বাকি যে খাতগুলো আছে ওই বিনিয়োগ খাতগুলোতে রাখুন। তাহলে দেখবেন একটা সময় পরে ভালো অঙ্কের টাকা জমা হয়েছে।

 

বিনিয়োগ করার জন্য কোথায় যোগাযোগ করবেন?

আপনি যে কোনো ব্যাংক বা ডাকঘর থেকে প্রাইজ বন্ড কিনতে পারেন। তবে সাধারণত সরকারি সকল ব্যাংক থেকেই আপনি প্রাইজ বন্ড কিনতে পারবেন। আর আপনি যদি গ্রামে থাকেন তাহলে আপনার বাড়ির পাশে যে ডাকঘর আছে তা থেকে কিনতে পারবেন এবং নগদায়ন করতে পারবেন। যদি ডাঘরে প্রাইজ বন্ড না থাকে তাহলে তাদের বললেই ব্যবস্থা করে দেবে।


বিনিয়োগ থেকে রিটার্ন কেমন আসবে?

প্রথম পুরস্কার ছয় লাখ টাকা।
দ্বিতীয় পুরস্কার তিন লাখ পঁচিশ হাজার টাকা।
তৃতীয় পুরস্কার এক লাখ টাকা।
এভাবে মোট ৪৬টি পুরস্কার আছে এবং এই ৪৬টি পুরস্কার হলো একটি সিরিজের জন্য, এমন ৭০টি সিরিজ আছে। তাহলে মোট পুরস্কারের সংখ্যা হলো ৩,২২০ টি।


বুঝতেই পারছেন পুরস্কারের সংখ্যা বেশ ভালো। সর্ব নিম্ন পুরস্কার হলো দশ হাজার টাকা। নিচে থেকে দেখে নিন প্রতি ড্র-তে প্রতি সিরিজে পুরস্কার কত দেওয়া হয়।

ক) ৬,০০,০০০ টাকার প্রথম পুরস্কার ০১ (এক) টি;
খ) ৩,২৫,০০০ টাকার দ্বিতীয় পুরস্কার ০১ (এক) টি;
গ) ১,০০,০০০ টাকার তৃতীয় পুরস্কার ০২ (দুই) টি;
ঘ) ৫০,০০০ টাকার চতুর্থ পুরস্কার ০২ (দুই) টি;
২২০টি।
ঙ) ১০,০০০ টাকার পঞ্চম পুরস্কার ৪০ (চল্লিশ) টি ।
প্রতি তিন মাস অন্তর এই ‘ড্র’ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছরের ৩১ জানুয়ারি, ৩০ এপ্রিল, ৩১ জুলাই ও ৩১ অক্টোবর ড্র অনুষ্ঠিত হয়। সকল পত্রিকায় ড্র-এর ফলাফল প্রকাশিত হয়। আপনি উল্লেখিত দিনে আপনার প্রাইজ বন্ড-এ টাকার মতোই সিরিয়াল নম্বর দেওয়া আছে, ওই নম্বর মিলিয়ে দেখুন। অথবা জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর এর ওয়েবসাইট থেকেও ড্র এর ফলাফল দেখে নিতে পারেন।


এখন প্রশ্ন আসতে পারে, প্রাইজ বন্ড যেই দিন কিনব তারপরের ড্র থেকেই কী আমি পুরস্কারের জন্য প্রযোজ্য হবে না। বন্ডে নির্দেশিত বিক্রয় তারিখ হতে ন্যূনতম দুই মাস অতিক্রমের পর উক্ত বন্ড ড্র এর আওতায় আসবে। ধরুন আপনি জানুয়ারি মাসের পাঁচ তারিখে প্রাইজ বন্ড কিনেছেন। তাহলে ৩১ জানুয়ারি তে যে ড্র অনুষ্ঠিত হবে ওই ড্র-তে আপনার প্রাইজ বন্ড প্রযোজ্য হবে না। পরের বার যখন ৩০ এপ্রিল ড্র অনুষ্ঠিত হবে তখন আপনার ক্রয়কৃত প্রাইজ বন্ড ড্র এর আওতায় আসবে।


সৌভাগ্যক্রমে আপনি যদি পুরস্কার পেয়ে যান তাহলে আপনি ড্র অনুষ্ঠানের নির্ধারিত তারিখ হতে দুই বছরের মধ্যে পুরস্কারের টাকা দাবি করতে পারবেন । এবং যে টাকা আপনি পুরস্কার পাবেন তার সঙ্গে আপনার প্রাইজ বন্ডের টাকা প্রদান করা হবে। ধরুন, আপনি প্রথম পুরস্কার ৬,০০,০০০ লাখ টাকা পেয়েছেন। তাহলে এর সঙ্গে আপনার প্রাইজ বন্ড ১০০ টাকা মিলে মোট ৬,০০, ১০০ টাকা পাবেন ৷


তবে পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থ হতে ২০% উৎসে কর কর্তন করে পুরস্কারের টাকা প্রদান করা হবে। যেমন, আপনি ৬,০০,০০০ টাকা পেয়েছেন। এই টাকা থেকে ১,২০,০০০ (৬,০০,০০০ X ২০%) টাকা কর্তন করে বাকি ৪,৮০,০০০ টাকা আপনাকে প্রদান করবে। এবং সঙ্গে প্রাইজ বন্ডের ১০০ টাকা। সব মিলে ৪,৮০, ১০০ টাকা। আপনি বিনিয়োগ করেছেন ১০০ টাকা, পেয়েছেন ৪,৮০, ১০০ টাকা। তাই প্রাইজ বন্ড ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের জন্য সেরা খাত।

1 thought on “সরকারি প্রাইজবন্ড ১০০ টাকায় ৬ লাখ টাকা জিতে নিন । প্রাইজবন্ড কি প্রাইজবন্ডের নিয়ম কানুন বিস্তারিত”

Comments are closed.

error: Content is protected !!