৯ ধরনের জমি কিনলে সেই জমি নামজারি হবে না ২০২৩ সাল থেকে । জমি নামজারিতে নতুন নিয়ম

আপনি এই বছর থেকেই আট ধরনের জমি নামজারি করতে পারবেন না. আপনারা জানেন যে কয়েকদিন আগেই ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ প্রতিকার আইনের নীতিগত অনুমোদন হয়েছে. মন্ত্রীসভায়. সামনে ভুমি ব্যবস্থাত্ব গ্রহণ আইন এবং হাট বাজারের স্থাপনা আইন সেগুলোও পাশ হতে যাচ্ছে. সব মিলিয়ে যেটা নীতিগত অনুমোদন হয়েছে সেখান থেকেই আপনি আট ধরনের জমি আপনার নামে নামজারি করাতে পারবেন না। তো কি কি জমি আপনাকে জেনে রাখা উচিত?


প্রথম কথা হচ্ছে আপনি ওয়ারিশান সম্পত্তি কিনেছেন দাগে দাগে। আপনাকে ভোগ দখল দিয়েছে চার দাগে, আপনি নামজারি আবেদন করেছেন বলতেছেন আমাকে এক দাগে তাঁরা পঁচিশ শতাংশ জমি দিয়েছে, সেই পঁচিশ শতাংশ আমাকে নামজারি করে দেন। আপনি আমজারি করতে পারবেন না, কারণ আপনার দলিলে লেখা আছে আপনাকে এই চারটা দাগের মধ্যে আপনাকে পঁচিশ শতাংশ দিয়েছে। তো নামজারি করতে গেলে আপনাকে পঁচিশ শতাংশই করতে হবে বিভিন্ন দাগে।


এখন কথা হচ্ছে আপনার আবার ভোগ দখল নেই । দখল নেই মানে যখন এসিল‍্যান্ড অফিস থেকে নামজারি আবেদন করার পর একটা সার্ভেয়ার প্রতিবেদন দিতে হয়, ওখানে তারা ইন্সপেকশন করে দেন তো আপনার union ভূমি সহকারী কর্মকর্তারা সার্ভেয়াররা যখন এই তদন্তটা করবে যখন দেখবে যে আপনার ওই সকল জমিতে আপনার কোনো ভোগ দখল নাই। তো আপনার ভোগ দখল আছে এক দাগে. তখন আপনি নামজারি বিষয়গুলি জটিলতায় পরবেন, আপনাকে তখন অনেক ক্ষেত্রে আটকায় দিতে পারে, এটার সুযোগ আছে। তখন আপনাকে বলবে ওই বিশ হাজার পঞ্চাশ হাজার টাকা দেন। তখন আপনি ক্লেম করেন যে ভূমি কর্মকর্তারা পয়সা খায়। তো পয়সা খাওয়ার ব্যবস্থা তো আপনি করে দিয়েছেন। আপনি তো নিজেই ভুল পদ্ধতির মধ্যে আছেন। শুরুটা তো আপনিই করেছেন তো সেক্ষেত্রে এটা তো একটা ঝামেলার সৃষ্টি হয়েই গেল


তারপর আসে যে হচ্ছে আপনার দলিলে আছে পঁচিশ শতাংশ। দখলেও আছে পঁচিশ শতাংশ, রেকর্ডে আছে পনেরো শতাংশ ! সেক্ষেত্রে আপনার নামজারি কি হবে? আপনার কিন্তু পঁচিশ শতাংশ নামজারি হবে না। একটা কথা আপনাদেরকে ভালোমতো মনে দরকার সেটা হচ্ছে রেকর্ড থেকে রেকর্ড হয়. নামজারিতেও একটা রেকর্ড. এটা ছোট রেকর্ড. এখন আপনার সিএস রেকর্ড. এসএ রেকর্ড. আরএস রেকর্ড. আপনি যাদের কাছ থেকে জমিটা পেয়েছেন কি নিয়ে পান? আওয়াজে পান, বিনিময়ে পান তাদের ওই রেকর্ডে দেখা যায় যে আপনার কাছে জমিটা দিয়েছে। এটা রেকর্ডে আছে হচ্ছে আপনার এখানে পনেরো শতাংশ,


আপনাকে একটা জিনিস মনে রাখতে হবে যে রেকর্ড করে ভূমিমন্ত্রনালয়ের লোকজন, এটা সরকারের একটা হিসেব। সরকারের একটা নথি। আর আপনার দলিল কিন্তু করে হচ্ছে একজন মুহুরী করে, আর দুই চার পাঁচটা করে তারা কোথায় কে? কোথায় কি ভুল করলো না করলো, তাঁরা অত কিছু দেখবেও না।


তাদেরকে আপনি দায়িত্ব দিবেন লিখে দিবে। আপনার ওখানে যে পনের শতাংশ রেকর্ড আছে এর মানে হচ্ছে আপনার ওখানে পনের শতাংশ টিকছে। অন্যান্য ওয়ারিশরা তারা পাইছে সবার অংশ দিয়ে এটি ওখানে পনেরো টিকছে, আপনাকে record ওখানে পনেরোই দিয়েছে। এখন আপনিও বললেন যে জমিটা পঁচিশ শতাংশ হইল কেমনে? দশ শতাংশ কোত্থেকে আসে? দশ শতাংশ কোথা থেকে আসেনি ? জমি তো কোন জায়গা থেকে তৈরি হয় না, ওই ওয়ারিসদের কোন জায়গার কোন ভাগের জমি আপনার এখানে চলে আসছে, তাঁরা এখনো টের পায় নাই। তাঁরা এখনো বের করেনি । এজন্য আপনার কাছে আছে।

যখন তাঁরা বের করবে, যখন তাঁরা টের পাবে তখন কিন্তু এই পনেরো শতাংশ। এই বাকি যে দশ শতাংশ যেটা আপনার কাজটাকে কেটে নিয়ে যাবে। তাঁরা ওই আপনাকে বের করে তাঁরা একটা কেস করে আপনার কাছ থেকে নিয়ে যাবে। তো সুতরাং আপনারা সাবধান থাকেন যে কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই দেওয়ানি হলে পরামর্শ নেবেন।এইভাবে আপনার নামজারিটি কিন্তু হবে না।

তারপর আসে সরকারি বন্দোবস্ত জমি কিনেছেন নামজারি কিন্তু করতে পারবেন না। একজন ব্যক্তির নিরানব্বই বছরের জন্য সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নিয়েছে, এখন তাঁর হচ্ছে নিয়মটা কি? সে ভোগ দখল করতে পারবে, তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর ছেলে মেয়ে নাতিপুতি যারা আছে নিরানব্বই বছর যাবত ভোগ দখল করতে পারবে। তারপর আবার সেটা সরকারের কাছে চলে যাবে। এরই মধ্যে যদি কেউ এই জমি বিক্রি করে ফেলেন । আপনি কিনে ফেলেন, তাহলে যে জেলা প্রশাসক মহোদয় আপনাকে জমিটা বরাদ্দ দিয়েছিলেন, আবার এটা তাঁর নামে চলে যাবে। এই ভুল করলে। নামজারিত হবেই না, বিক্রি করা যাবে না, এটা ভোগ দখল করতে পারে নিজের ছেলে মেয়েরা। যদি কেউ করে ফেলে এটা আবার ডিসিশন পর্বত চলে যাবে।


তারপর আসে বায়নাকৃত জমি পুনরায় চুক্তিভক্ত হয়ে বিক্রি করলে, আপনি একজনের জন্য রেজিস্টার্ড চুক্তি করেছেন। রেজিস্ট্রি অফিসে, মুখে মুখে বায়না, মুখে মুখে বন্ধ করেন, একটা স্টাম্পেল লিখে নেন, এগুলোর কিন্তু কোন দাম নেই, চার লাখ পাঁচ লাখ দুই লাখ যাই দেন, এই মুখে মুখে বন্ধক, মুখে মুখে বায়নার কোন দাম নাই। নিজে নিজে একটা স্ট্যাম্প করে নিলেন, নিজে নিজে সিগনেসার নিলেন, এটার কোন দাম নেই, আপনাকে সাব রেজিস্টার অফিসার কর্তৃক এটারে পাশ করিয়ে নিতে হবে। এটা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে হবে, যদি এটা রেজিস্ট্রিকৃত হয় তাহলে এই যে একজনের সাথে আপনি বায়না চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।


তারপরে একজনের কাছে আপনি বিক্রি করেছেন। যিনি কিনেছেন তিনি আর একটা নামজারি করতে পারবেন না। কারণ ওই ব্যক্তি যদি ক্লেম করে অফিসে গিয়ে তাহলে নামজারিটা হবে না। বাতিল হয়ে যাবে। তো মাথায় রাখেন এবং আপনার বিক্রিটাও শুদ্ধ হবেন, আপনি জমিতে কিনেছেন, এটাও বাতিল হয়ে যাবে, তো তিনি যদি মামলা করেন।


তারপর ভুল বুঝিয়ে দানপত্র যদি হেবা করে নেন. আপনি যদি কারো কাছ থেকে আপনার বাবা, মা, দাদা, দাদি, তাঁরা কারোর কাছ থেকে ভুল বুঝিয়ে, চাপ প্রয়োগ এই কথা বলে আপনি হুট করে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ঢুকে চাপ প্রয়োগ করে বা বিভিন্ন ইমোশনাল করে যে আমি তোমাদেরকে দেখেছি। এই যে ভুল বুঝিয়ে চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন ভাবে জাল জালিয়াতি করে আপনি যে দানপত্র করেন সেটাও কিন্তু আমি নামজারি করতে পারবেন না। যদি এটার উপর অভিযোগ চলে যায়, মামলা হয়। এই যে নতুন ভূমি অপরাধ প্রতিরোধক আইন এখানে আপনার জরিমানার সাথে সাথে জেলে যাওয়ারও সুযোগ আছে


আপনি সহ উত্তরাধিকারীর জমি দখলে নিয়েই বিক্রি করেছেন। এখন আপনার জমি আপনার যতটুকু অংশ পান আপনি তার চাইতেও বেশি বিক্রি করেছেন। আপনি বোনের জমি, আপনার ভাইয়ের জমি, নিজের অংশের চেয়ে সহ উত্তরাধিকারের জমি বেশি করে বিক্রি করে ফেলেছেন। সাব রেজিস্টার অফিস হচ্ছে অষ্টম আশ্চর্য। এখানে অনেক কিছুই হয়। রেজিস্ট্রি করে দিলেই মালিক হওয়া যায় না। এসিল‍্যান্ড অফিস একটা সরকারি অফিস, একজন বিসিএস কর্মকর্তা আছে। তিনি সব কিছু জেনে বুঝে আপনাকে রেকর্ড করে দেবেন। আপনি দলিল করেছেন, কিছুই যায় আসে না। আপনি এখানে নামজারি করাতে পারবেন না। এসিল্যান্ড সাহেব অনেক কিছু চেক করে রাখবেন। সো সাবধান এটা এতো সহজ না।


তারপর ২০০৪ এর পর অবৈধ হেবা হয়ে থাকলে, অবৈধ ব্যাপারটা কি? যেমন ২০০৪ এর আগে তখন এটা হচ্ছে হেবাবীল আওয়াজ হইত। চাচার কাছ থেকে, মামার কাছ থেকে নেওয়া যাইতো, এটা কিন্তু অতীতে হয়েছে। ২০০৪ আগে বা নব্বই এর দশকে তখনই হেবাদবীল আওয়াজ ছিল। তখন এটা কিন্তু টিকবে। এটা মনে করার কোন কারণ নেই যে এটা টিকবে না।২০০৪ এর পর থেকে এখন এই কড়াকড়ি করা হয়েছে, এটা শুধু চোদ্দ জন ব্যক্তির মধ্যে হেবাবিল পড়তে পারবেন। হেবা পড়তে পারবেন, আদান প্রদান, এটা শুধুমাত্র ছেলে মেয়ে দাদা দাদি বাবা মা আরো কিছু ব্যক্তি আছে ভাই বোন এই চোদ্দজন। এটার বাইরে ভাতিজা চাচা মামা ভাগিনা এগুলো কোনোভাবেই চলবে না।


তারপর ষাট বিঘার জমি বেশি হলেও আপনি নামজারি করতে পারবেন না, যদি মনে করেন যে আপনি হচ্ছে আমি তো কিনি নাই আমার বাবাই দিয়ে গেছে তিরিশ বিঘা, আমি নানার বাড়ি থেকে পাইছি বিশ বিঘা, দাদার কাছ থেকে পাইছি দশ বিঘা, আপনি আবার কিনছেন তিন বিঘা, ষাট বিঘা এর বেশি যাই হবে এটা সরকার বিনা জরিমানায় এটা করে নিবে, আপনার কাছ থেকে বের করে নিবে

error: Content is protected !!