ফ্রিল্যান্সিং জব এই কথাটা অনেকেই হয়তো শুনেছেন এখন পর্যন্ত । বাংলাদেশ সরকার এই প্রথম ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ডের ব্যবস্থা করেছে । আইডি কিভাবে পাবেন ? ফ্রীলান্সার আইডি কার্ডের সুবিধা অসুবিধা ? এবং রেজিস্ট্রেশন প্রসেস সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব ।
ফ্রিল্যান্সার আইডি কি ?
ফ্রিল্যান্সার আইডি প্রদানের মাধ্যমে সরকার এই পেশাটাকে বাংলাদেশে স্বীকৃতি প্রদান করছে । বাংলাদেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সামাজিক স্বীকৃতি থাকলেও ফ্রিল্যান্সারদের সামাজিক স্বীকৃতি ছিল না কিছুদিন আগেও , এটির মাধ্যমে আপনি সহজেই যেকারো কাছে প্রমাণ করে দিতে পারবেন আপনি সরকার স্বীকৃত একজন ফ্রিল্যান্সার । আমরা আমাদের জাতীয় পরিচয় পত্র যেমন হাতে সরাসরি কার্ড আকারে পেয়ে থাকি এই কার্ডটি তেমন নয়, এটি ভার্চুয়ালি প্রদান করা হবে ।
ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ডে কি কি থাকছে :
ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ডে আপনার বিভিন্ন প্রকার তথ্য নাম, ঠিকানা, মেইল আইডি, আইডি নাম্বার, জন্ম তারিখ, কাজের পদবী, দক্ষতা, কত তারিখে ইস্যু করা হয়েছে ও QR Code থাকবে । আমরা অনেকেই জানি অধিকাংশ জিনিসেরই ভাল এবং মন্দ দিক থাকতেই পারে , এটার ক্ষেত্রে অনেকের কাছে অনেক দিক সুবিধার মনে হতে পারে আবার অনেক দিক অসুবিধার মনে হতে পারে । ঠিক তেমনি ভাবে আমার কাছেও কিছু সুবিধা মনে হয়েছে আবার কিছু অসুবিধা মনে হয়েছে ।
ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ডের সুবিধা সমূহ :
- ১) আপনি একজন সরকার স্বীকৃত ফ্রিল্যান্সার এবং ১৩ ডিজিটের একটি আইডি নাম্বার পাবেন ।
২) ভবিষ্যতে ফ্রিল্যান্সার আইডি দিয়ে কোন প্রকার পাসপোর্ট ছাড়াই আপনি ডুয়েল কারেন্সি ডেবিট কার্ড পেতে পারেন ।
৩) আইডি থাকা অবস্থায় আপনি সরাসরি বাংলাদেশের যেকোন ব্যাংকের মাধ্যমে, কোন মার্কেটপ্লেস থেকে পেমেন্ট নিলেন সরকার আপনাকে ১০ পার্সেন্ট বোনাস প্রদান করবে ।
৪) ফ্রিল্যান্সার আইডির মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে ব্যাংকি হতে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন (যদিও এখন করা যায় সে ক্ষেত্রে বেশ কিছু অন্যান্য ডকুমেন্টস এর দরকার হয়)
৫) সরকারি চাকরিজীবীদের যেমন সরকার পেনশন প্রদান করে থাকে চাকরি শেষে, ঠিক তেমনি বুড়ো বয়সে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সরকার পেনশন প্রদান করবে । যদিও সরকার এটা ভবিষ্যতে করার চিন্তা ভাবনা করছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি এই বিষয়ে ।
ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ডের অসুবিধা সমূহ :
- ১) আপনি যদি একজন কোটিপতি ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন শুধুমাত্র এই কার্ডটি আপনার জন্য । কেননা কার্ডটি নিতে গেলে আপনাকে প্রত্যেক বছরের ১৫০০ টাকা সরকারি ফি প্রদান করতে হবে । (বাংলাদেশে প্রায় ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছে তাদের কাছ থেকে ১৫০০ টাকা করে ফি নিলে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা সরকারি খাত থেকে পাবে , কিন্তু এই টাকা সরকার কোথায় ব্যবহার করবে সে বিষয়ে ফ্রিল্যান্সাররা তেমন কিছুই কেউ জানে না )
২) ফ্রিল্যান্সার কার্ড করতে গেলে অবশ্যই আপনার নাম ঠিকানা প্রদানের পাশাপাশি আপনি বছরে কোন মার্কেটপ্লেস থেকে কত টাকা ইনকাম করেন এ টু জেড ডিটেলস প্রদান করতে হবে । বিশেষ করে ইনকাম ডিটেইলস প্রদানের বিষয় একজন সাধারণ মানুষের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে এটি আমার মতামত ।
৩) কার্ডের যেকোনো ধরনের তথ্য পরিবর্তন করতে গেলেও পনেরশো টাকা ফি প্রদান করতে হবে ।
৪) প্রতি বছরই কার্ড রিনিউ করতে হবে এবং এর জন্য পনেরশো টাকা গুনতে হবে ।
৫) ১ বছরে যদি কোন মার্কেটপ্লেস থেকে ১০০০ ডলার ইনকাম করেন, তবে শুধুমাত্র এটি পেয়ে থাকবেন ।
৬) ২০২৪ সাল পর্যন্ত ফ্রিল্যান্সার আইটি খাতে সরকার ট্যাক্স নিবে না, তবে পরবর্তী সময় থেকে এনবিআরের নোটিশ অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে এ খাত থেকে সরকার প্রচুর পরিমাণে ট্যাক্স আহরণ করতে পারে । যার ফলে একজন ফ্রিল্যান্সার এই কার্ড নিতে গিয়ে, যদি তার ইনকাম ডিটেলস এ টু জেট প্রদান করে সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে ট্যাক্সের পরিমাণ বহুগুণে বেড়ে যেতে পারে ।
৭) বর্তমান সময়ে আপাতদৃষ্টিতে সরকারি স্বীকৃতি ছাড়া এই কার্ডটি তেমন কোনো গুরুত্ব নেই বললে বলা চলে ।
ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড কিভাবে পাব ?
এমন প্রশ্ন অনেকেই করতে পারেন, তাদের জন্য নিচের রুলস মানতে হবে ।
ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড নেওয়ার জন্য বিশেষ যোগ্যতা :
- ১) ফ্রিল্যান্সার আইডি নাম্বার জন্যই জন্মগতভাবে আপনাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে ।
২) যেকোনো মার্কেটপ্লেস থেকে এক বছরে সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা ইনকাম প্রমাণ সহ দেখাতে হবে ।
৩) প্রতিবছর এবং যেকোন সময়ে তথ্য পরিবর্তন করতে চাইলে ১৫০০ টাকা ফি দিয়ে যোগ্যতা সাপেক্ষে আইডি পাবেন ।