অনাবাসী বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকদের জন্য এই বন্ড প্রযোজ্য । আপনি জানেন দেশের বাইরে ব্যাংকে অর্থ জমা রাখলে খুবই অল্প মুনাফা পাওয়া যায়। যে মুনাফা পাওয়া যায় তা আবার অ্যাকাউন্ট পরিচালনার জন্য ব্যয় হওয়ার পর তেমন উল্লেখ করার মতো কিছু থাকে না। আপনি যে শেয়ারে বিনিয়োগ করবেন তার জন্য মার্কেট বিশ্লেষণ করার মতো তেমন সময় নেই। আবার যদি ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজার এর সাহায্যনেন তাতে কমিশন দিয়েও তেমন বড় কোনো লাভ হয় না।
এ ক্ষেত্রে আপনি ইউএস ডালার প্রিমিয়াম বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। এই বন্ডে বিনিয়োগ করলে একদিকে মুনাফার হার বেশি ৭.৫% এবং অন্যদিকে এই মুনাফা সম্পূর্ণ করমুক্ত । দেশের বাইরে বিনিয়োগ করে ৭.৫% রিটার্ন পাওয়া তার ওপর করমুক্ত, প্রায় অসম্ভব ।
আমেরিকাতে সরকার ইস্যুকৃত বন্ডে ৪% এর বেশি মুনাফা পাওয়া যায় না। অস্ট্রেলিয়াতেও সরকারের ইস্যুকৃত বন্ড থেকে ৪% মুনাফা পাওয়া যায়। আর ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করলে ৩.৫% থেকে সর্বোচ্চ ৪%। কেউ যদি বিনিয়োগ এবং মুনাফার নিরাপত্তা চান, ঝুঁকি নিতে আগ্রহী না হন তাহলে ৪% এর বেশি মুনাফা পাওয়া অসম্ভব । এই মুনাফার ওপর আবার কর দিতে হবে।
অথচ আপনি ভেবে দেখুন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত নিরাপদ এই বিনিয়োগ খাত থেকে ৩.৫% বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে। এবং এই মুনাফা সম্পূর্ণ করমুক্ত। তাই আপনি যদি দেশের বাইরে থাকেন সে ক্ষেত্রে আপনি এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন । এতে করে একদিকে আপনি বেশি মুনাফা পাবেন এবং অন্যদিকে এর ওপর কোনো কর দিতে হবে না।
এই বিনিয়োগ কী আপনার জন্য উপযুক্ত?
আপনি এই বন্ডে বিনিয়োগকৃত ডলার চাইলে আপনার বিদেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিতে পারবেন। তবে মুনাফার টাকা বাংলাদেশি টাকায় বাংলাদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিতে হবে। আবার চাইলে বিনিয়োগকৃত টাকা মুনাফাসহ বাংলাদেশি টাকায়ও নিতে পারবেন। শুধু সীমাবদ্ধতা হলো মুনাফার টাকা বাংলাদেশি টাকায় নিতে হবে। আপনি এখন যে দেশে আছেন, আপনার যদি প্ল্যান থাকে ওই দেশেই স্থায়ী ভাবে থেকে যাবেন বা ভবিষ্যতে অন্য কোনো দেশে স্থায়ীভাবে থেকে যাবেন তাহলে আপনি এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। কারণ, আপনি যেহেতু দেশের বাইরেই থাকার চিন্তা করছেন তাহলে যে দেশে থাকবেন সেখানে আপনার অর্থের দরকার হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে টাকা বিদেশে আনাটা বেশ জটিল। তাই আপনি এই জটিলতা এড়ানোর জন্য এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন।
তাহলে এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, আমার যে বিনিয়োগ থেকে মুনাফা আসেবে যেটা বাংলাদেশে টাকায় জমা হবে তা দিয়ে কী করব?
আপনি ভেবে দেখতে পারেন, বাংলাদেশে আপনার টাকার দরকার আছে কিনা? যেমন হতে পারে, আপনার বাংলাদেশে মা-বাবা আছেন, আপনার পরিবারকে এখনো দেশের বাইরে আপনার কাছে নিতে পারেননি কিন্তু তাদের প্রতি মাসে খরচের টাকা পাঠাতে হয়। আপনি প্রতি মাসে খরচের টাকা বিদেশ থেকে না পাঠিয়ে এই বন্ডে যদি বিনিয়োগ করেন তাহলে মুনাফা বাংলাদেশে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে। পরে ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে আপনি আপনার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দিতে পারেন। এখন অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা থাকার কারণে আপনি যেকোনো দেশেই থাকেন না কেন আপনি যখন দরকার পরবে তখন টাকা ট্রান্সফার করতে পারবেন।
আপনি পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি অন্য যেকোনো কাজেও ব্যবহার করতে পারেন। আবার এই টাকা যদি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয় তাহলে আপনি দেশে যখন বেড়াতে যাবেন তখন এই জমানো টাকা খরচ করতে পারবেন। সঙ্গে করে আর টাকা নিয়ে আসতে হবে না।
আবার হতে পারে, যখন বাংলাদেশে আসবেন তখন থাকার জন্য একটা ফ্ল্যাট কিনতে চাচ্ছেন। ওই ফ্ল্যাটের ডাউনপেমেন্ট বা মাসিক কিস্তি এই মুনাফার টাকা থেকে দিতে পারবেন। প্রতি মাসে আপনাকে আর রেমিট্যান্স পাঠাতে হবে না। যদি এই ধরনের কোনো কারণ থাকে বা এর বাইরে আপনার উপযুক্ত কোনো কারণ থাকে তাহলে আপনি এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন।
আবার আপনি যদি ওয়েজ আর্নার বন্ডে বিনিয়োগ করে থাকেন তাহলে জানেন ওই বন্ডে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা হলো এক কোটি টাকা পর্যন্ত। আপনার যদি আরও টাকা থাকে তাহলে আপনি এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। কারণ, ওয়েজ আর্নার বন্ডের মতো ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ডও করমুক্ত। আর যেহেতু বিনিয়োগকৃত টাকা এবং মুনাফা আপনি টাকায় নিতে পারবেন তাই মেয়াদান্তে আপনি আপনার বাংলাদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিতে পারবেন।
কত পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন?
আপনি তিন বছর মেয়াদি এই বন্ডে ইউএস ডলার ৫০০ থেকে শুরু করে ০১ কোটি টাকার সমপরিমাণ ইউ এস ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন।
বিনিয়োগ থেকে রিটার্ন কেমন আসবে?
এই বন্ড থেকে মুনাফার হার ৭.৫% তা একটু আগে জেনেছেন। এই মুনাফা দেওয়া হবে আপনার বিনিয়োগ কৃত ইউএস ডলারের ওপর। ইউএস ডলারে যে মুনাফা পাবেন তা বাংলাদেশি টাকায় কনভার্ট করে আপনাকে প্রদান করা হবে। তিন বছর মেয়াদি এই বন্ড। থেকে আপনি ছয় মাস পরপর মুনাফা প্রাপ্ত হবেন।
এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আপনার বিনিয়োগকৃত টাকা যতই হোক আপনি একটি হারে মুনাফা পাবেন। সঞ্চয়পত্র এবং ওয়েজ আর্নার বন্ডের ক্ষেত্রে দেখেছেন বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়তে থাকলে মুনাফার হার ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে। কিন্তু ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ডের ক্ষেত্রে মুনাফার হার সব সময় ৭.৫%। তাহলে আপনি যদি এক কোটি টাকার সম পরিমাণ ডলার এই বন্ডে বিনিয়োগ করেন তাহলে ৭.৫% হিসেবে মুনাফা পাবেন।
ধরুন, আপনি ১,০০০ ইউএস ডলার বিনিয়োগ করেছেন। তাহলে ছয় মাস পর ৭.৫% হিসেবে মুনাফা পাবেন ৩৭.৫ (১,০০০X৭.৫%)/২ ডলার। যেহেতু আপনি বছরে দুইবার মুনাফা পাবেন তাই এক বছরের মুনাফাকে দুই দিয়ে ভাগ করেছি। এক বছরে মুনাফা আসে ৭৫ ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় কনভার্ট করলে ৭,৫০০ টাকা হয় (১ ডলার ১০০ টাকা সমমান ধরে)। তবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান যদি আরও কমে তাহলে আপনার এই মুনাফার পরিমাণ বাড়তে থাকবে। আর একটু আগেই জেনেছেন, এই মুনাফা সম্পূর্ণ করমুক্ত তাই কোনো কর কর্তন ছাড়াই আপনি সম্পূর্ণ ৭,৫০০ টাকা পেয়ে যাবেন।
এখানে আপনি বলতে পারেন, আমি যদি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতাম তাহলে ১০% কর কর্তনের পরেও আমি বছরে ১,০০,০০০ টাকায় ন্যূনতম ১০,০০০ টাকা পেতাম। কিন্তু এখান থেকে আমি ৭,৫০০ টাকা পাচ্ছি। তাহলে আমি কেন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না করে এই বন্ডে বিনিয়োগ করব?
আপনি ঠিকই বলেছেন। তবে আপনি যেহেতু এই বন্ডে বিনিয়োগকৃত ডালার আবার ডলারেই নিতে চাচ্ছেন তাই এই বন্ডে বিনিয়োগ করবেন। আপনি সঞ্চয়পত্রে বা ওয়েজ আর্নার বন্ডে বিনিয়োগকৃত টাকা দেশের বাইরে নিতে গেলে জটিলতায় পড়তে পারেন। এই বন্ডে বিনিয়োগের মূল উদ্দেশ্য হলো, আপনি বিনিয়োগকৃত ডালার আপনি যে দেশে থাকেন ওই দেশে মেয়াদান্তে ফেরত নেবেন। আর যে মুনাফা বাংলাদেশে পাবেন তা দিয়ে বাংলাদেশে দরকারি কাজে ব্যবহার করবেন। এ জন্য কিছু মুনাফা কম পেলেও তেমন ক্ষতি নেই । তিন বছর শেষ হয়ে গেলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে একাধিক মেয়াদের জন্য পুনঃবিনিয়োগ সুবিধা রয়েছে তাই নতুন করে আবার ঝামেলা করতে হবে না। বিনিয়োগ করার পর যদি কোনো কারণে অর্থের প্রয়োজন হয় তাহলে বিনিয়োগকৃত অর্থের বিপরীতে ঋণ নিতে পারবেন। এবং আপনি নমিনিও নিয়োগ করতে পারবেন। কোনো কারণে বন্ড হারিয়ে গেলে, পুড়ে গেলে বা নষ্ট হলে ডুপ্লিকেট বন্ড ইস্যুর সুযোগ রয়েছে।