ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাবের মতোই সাধারন হিসাব পরিচালিত হয়। তবে ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব থেকে তেমন মুনাফা পাওয়া যায়না। কিন্তু ডাকঘর দ্বারা পরিচালিত সাধারন হিসাব থেকে ভালো মুনাফা পাওয়া যায়। এবং আপনি মাস গেলেই এই মুনাফা পাওয়ার অধিকারী হবেন। আপনার কাছে যতো অল্প টাকাই থাকুক না কেন আপনি তা সাধারন হিসাবে জমা রাখতে পারেন। হাতে টাকা রাখলে চুরি হয়ে যাওয়ার একটা ভয় থাকে। তাই আপনি যখনই কিছু টাকা পাবেন তা যদি সাধারন হিসাবে রেখে দেন তাহলে একদিকে যেমন নিরাপদ থাকলো আরেক দিকে মুনাফা যোগ হয়ে আপনার টাকা বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
ছেলে মেয়ে শহরে পড়ালেখা করে তাদেরকে নিয়মিত পড়া, থাকা-খাওয়ার টাকা দিতে হয়। হাতে সব সময় টাকা না থাকলেও আপনি যদি সাধারন হিসেবে আগে থেকে জমা করে রাখেন তাহলে এখান থেকে তুলে মাসে মাসে পাঠাতে পারবেন। আবার এই হিসাব থেকে যেহেতু প্রতি মাসে মুনাফা পাওয়া যায় তাই আপনি এককালীন যদি টাকা জমা রেখে দেন তাহলে তা থেকে যে মুনাফা পাবেন তা দিয়ে তাদের পড়ালেখার খরচ চালাতে পারবেন।
শুধু গ্রামে যারা থাকেন তারাই যে ডাকঘরে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করেন তেমনটা না। শহরের অনেক মানুষই এখন বিনিয়োগ নিরাপত্তা এবং রিটার্নের কথা চিন্তা করে ডাকঘরে টাকা রাখছেন। ২০২১ সালে ডেইলি স্টারে এমনি একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তাতে লেখা হয়, জিপিও-তে প্রচুর মানুষ ডাকঘর পরিচালিত অ্যাকাউন্ট-এ টাকা জমা এবং উত্তোলন করার জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আসলে সঞ্চয় ও বিনিয়োগকারি যদি নিরাপদ বিনিয়োগস্থল এবং মুনাফার হার বেশি পায় তাহলে সেখানে টাকা রাখবেই।
সাধারন হিসাব খুলতে দরকারী কী কাগজপত্র লাগবে?
তেমন বেশি কিছু দরকার পরে না। যিনি অ্যাকাউন্ট খুলবেন তার ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র, নমিনীর ছবি ইত্যাদি। এছাড়াও আপনি ডাকঘরে কথা বলে জেনে নিতে পারেন কী কী কাগজপত্র দরকার হবে। যে কাগজপত্রগুলো লাগবে তা নিয়ে আপনি খুব সহজেই সাধারন হিসাব খুলে টাকা জমানো শুরু করতে পারেন। আপনি ব্যাংকে হিসাব খুললে লেনদেন করার জন্য যেমন চেক বই দেওয়া হয় তেমনি ডাকঘর সাধারন হিসাব খুললেও চেক বই পাবেন। এই চেক বই দিয়ে আপনি জমানো টাকা এবং মুনাফার টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
কতো পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন?
সঞ্চয়পত্র এবং বন্ডের মতো সাধারন হিসাবেও আপনি একটা নির্দিষ্ট সীমার বেশি জমা রাখতে পারবেন না। একক নামে ১০ লাখ টাকা এবং যুগ্ম নামে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা রাখতে পারবেন। যদি আপনার জমানো টাকা বিনিয়গের সীমা পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে বিনিয়োগের যে আরো খাত সম্পর্কে আপনি জেনেছেন যেমন সঞ্চয়পত্র, মেয়াদী হিসাব ইত্যাদি খাতেও বিনিয়োগ করতে পারেন।
তবে আপনি সঞ্চয় ও বিনিয়োগের জন্য যদি ডাকঘরে এই একটি সাধারন হিসাব পরিচালনা করেন তাহলে এখান থেকে আপনি যখন সঞ্চয়পত্র কিনবেন তখন এই হিসাব থেকে টাকা দিয়েই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। আবার যদি ডাক জীবন বীমা করেন। তাহলেও এই হিসাব থেকেই টাকা দিয়ে জীবন বীমার প্রিমিয়াম দিতে পারবেন।
যখন সঞ্চয়পত্র এবং জীবন বীমা মেয়াদোত্তীর্ণ হবে তখন মেয়াদান্তে যে টাকা পাবেন তাও এই হিসাবে রাখতে পারবেন। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের একটা নির্দিষ্ট সীমা আছে। তারপর সবচেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যায় ডাকঘর পরিচালিত মেয়াদী হিসাব থেকে। সঞ্চয়পত্রের সীমা পূর্ণ হয়ে গেলে আপনি তখন ডাকঘর সাধারন হিসাবে যে টাকা রাখছেন তা আপনি ডাকঘরেই মেয়াদী হিসাবে রেখে উচ্চ হারে মুনাফা পেতে পারেন। আপনি একটি সাধারন হিসাব দিয়ে একসাথে অনেক কাজ করতে পারবেন।
বিনিয়োগ থেকে রিটার্ন কেমন?
সাধারন হিসাব থেকে আপনি মাসিক ভিত্তিতে ৭.৫% হিসেবে মুনাফা পাবেন। ধরুন, আপনি ১,০০,০০০ টাকা জমা রেখেছেন। এক মাস অতিক্রম হওয়ার পরই আপনি মুনাফা পাওয়ার যোগ্য হবেন।
প্রথম মাসে আপনি মুনাফা পাবেন ৬২৫ (১,০০,০০০X৭.৫%)/১২ টাকা। যেহতু ৭.৫% হিসেবে আপনি এক বছরে মুনাফা পাবেন তাই এক মাসের মুনাফা বের করার জন্য ১২ দিয়ে ভাগ করেছি।
এই মুনাফার উপর ১০% উৎসে কর কর্তন প্রযোজ্য। তাহলে কর কর্তন করবে ৬২.৫০ (৬২৫X১০%) টাকা।
কর কর্তনের পর আপনাক প্রদান করবে (৬২৫-৬২.৫)= ৫৬২.৫০ টাকা।
এক মাসেরও মুনাফা প্রদান করা হয়। ধরুন, আপনি ১,০০,০০০ টাকা জমা রেখেছেন তারপর এক মাস অতিক্রম হলেই আপনি উপরে উল্লেখিত মুনাফা প্রাপ্ত হবেন। এর পরের মাসে যদি টাকা তুলে ফেলেন তাতেও কোন সমস্যা নেই।
সাধারন হিসেবে আপনি যে টাকা সঞ্চয় করেছেন তা যদি আপনার আগামী কয়েক বছর দরকার না পরে তাহলে আপনি ডাকঘর পরিচালিত মেয়াদী হিসাবে তিন বছরের জন্য ফিক্সড করে রেখে দিতে পারেন। এতে করে আপনি আরো বেশি মুনাফা পাবেন।