মাস শেষে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্য পূরণ করার জন্য বিনিয়োগ করা হয়। এখন এই ক্ষুদ্র সঞ্চয় যখন বিনিয়োগ করবেন তখন সবকিছু বুঝে শুনে বিনিয়োগ করা উত্তম । কারণ, কিছু সময় দেখা যায় অনেক বিনিয়োগ কারীর বিনিয়োগকৃত টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন। রিটার্নতো দূরের কথা আসল টাকাও পাওয়া যায় না। এত কষ্ট করে টাকা জমিয়ে পরে যদি পাওয়া না যায় তাহলে দুঃখজনক। তাই ভালোভাবে বুঝে শুনে বিনিয়োগ করা উচিত। আপনি যেখানে আপনার সঞ্চয়ের টাকা রাখছেন এবং পরে বিনিয়োগ করছেন সে টাকা থেকে এখন নির্দিষ্ট সময় পর পর আপনি রিটার্ন পাচ্ছেন এবং মেয়াদান্তে বিনিয়োগকৃত টাকা ফিরে পাওয়া নিয়ে আপনি নিশ্চিত। এই নিয়ে কোনো সংশয় নেই, অনিশ্চয়তা নেই।
কিন্তু আপনি কী ওই বিনিয়োগ থেকে সর্বোচ্চ রিটার্ন পাচ্ছেন? আপনি যদি বিনিয়োগ থেকে আরও ভালো রিটার্ন পেতেন তাহলে নিশ্চয় আরও ভালো হতো। বিনিয়োগ করার আগে কিছু বিষয় বিবেচনা করে নিন তাহলে আপনার বিনিয়োগ থেকে সর্বোত্তম রিটার্ন আশাকরতে পারবেন।
ঝুঁকি কেমন আছে?
বিনিয়োগের আগে আপনি ভেবে দেখুন কেমন ঝুঁকি নিতে আপনি প্রস্তুত আছেন। যদি বেশি ঝুঁকি নেওয়ার সাহস থাকে তাহলে আপনি ওই বিনিয়োগ থেকে রিটার্নও বেশি পাবেন। কিন্তু এর উল্টোটাও হতে পারে। তবে বিনিয়োগের শুরুতেই বেশি ঝুঁকি না নেওয়াই ভালো। আস্তে আস্তে যখন আপনার জমানো টাকার পরিমাণ বাড়তে থাকবে এবং আপনার মনে হবে এখন বেশি ঝুঁকি নিলেও বড় ধরনের কোনো বিপদ হবে না তখন আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন। তবে একদম না জেনে-বুঝে ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না।
আপনি বিনিয়োগের টাকা দিয়ে কী করতে চাচ্ছেন? আপনার লক্ষ্য কী?
যদি স্বল্প মেয়াদি লক্ষ্য হয় তাহলে যেসব খাতে আপনি স্বল্প মেয়াদি বিনিয়োগ করতে পারবেন ওই সব খাতেই বিনিয়োগ করুন। স্বল্প মেয়াদি বিনিয়োগে রিটার্ন সাধারণত কম আসে। আর যদি দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্যে বিনিয়োগ করেন তাহলে কোনো খাতগুলো দীর্ঘ। মেয়াদের জন্য প্রযোজ্য তা জেনে বিনিয়োগ করুন। দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগ খাত থেকে। তুলনামূলকভাবে বেশি রিটার্ন পাওয়া যায়। বইটিতে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগ। এবং তা থেকে রিটার্ন কেমন আসবে তা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি সময় নিয়ে সব বিষয় বিবেচনা করে সেরা বিনিয়োগ খাতে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করুন।
বিনিয়োগ খাত সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান
সঞ্চয় ও বিনিয়োগের আগে ভেবে দেখুন আপনি যে খাতে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করছেন সে খাত সম্পর্কে আপনার যথেষ্ট জ্ঞান আছে কিনা। তবে সব খাত সম্পর্কে গভীর জ্ঞান না। থাকলেও চলবে।যেমন ফিক্সড ডিপোজিট । কোনো ব্যাংক কত হারে সুদ দেয় এবং সময় শেষে আসলসহ সুদ পাওয়া যাবে কিনা তা নিশ্চিত হতে পারলেই হবে। কিন্তু আপনি যদি শেয়ার বাজার থেকে সেকেন্ডারি শেয়ারে বিনিয়োগ করতে চান। তাহলে আপনার যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। আপনাকে কোম্পানির আর্থিক বিবরণী, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, বিশ্ব অর্থনৈতিক অবস্থা, শেয়ার প্রাইস ক্যালকুলেশন ইত্যাদি সম্পর্কে। ভালো জ্ঞান রাখতে হবে।
তবে আপনি বলতে পারেন বাংলাদেশে শেয়ার বাজার সম্পর্কে জ্ঞান থাকার দরকার নেই। এখানে কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচয় থাকলেই হয়। তাঁরা যে শেয়ার কিনবেন, আমিও যদি ওই শেয়ার কিনি এবং তাঁরা যখন বিক্রি করবেন তখন আমিও বিক্রি করি তাহলে এমনিতেই লাভ হবে। আর্থিক বিবরণী দেখে কোনো কোম্পানির শেয়ার প্রাইস নির্ধারণ হয়। না। ২০১০ সালে যখন শেয়ার বাজার তুঙ্গে তখন আমি সিএ পড়ছি । আমি তখন জানি একটি কোম্পানির শেয়ার প্রাইস কত হওয়া উচিত, কত রিটার্ন পাওয়া যাবে, কীভাবে শেয়ার প্রাইস নির্ধারণ হয় ইত্যাদি।
যখন শেয়ার প্রাইস বাড়ছে তখন আমি বুঝতে পারছিলাম এটা একটা পাগলামি এবং যেকোনো সময় এই শেয়ার প্রাইস তলানিতে চলে আসবে। এবং ঠিক তাই হয়েছে। এটা বোঝার আরেকটা কারণ ছিল, পশ্চিমা বিশ্বে রিসেশন নিয়ে অনেক আগে থেকে কথা হচ্ছিল । তখন আমি নিয়মিত বিবিসি, সিএনএন, গার্ডিয়ান পড়ছিলাম এবং এই বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছিলাম। পরে ২০০৮ সালে আমেরিকাতে হাউজিং মার্কেট কলাপস করে। এই বিষয়ে একটি মুভি হয় ‘দি বিগ শর্ট (২০১৫)’ যা রিলিজের পর প্রশংসিত হয়। এই মুভিতে উঠে আসে শেয়ার প্রাইস বাড়ার পেছনে কিছু মানুষের পাগলামি এবং অজ্ঞতার কাহিনি।
২০১০ সালের আগে যারা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেছেন তারা শুধু জানতেন যে পরের দিন আরও বাড়বে। প্রতিদিন শুধুই বেড়ে যাবে। তাই জমি বিক্রি করে, মায়ের গয়না বিক্রি করে, বাবার পেনশনের টাকা দিয়ে শেয়ার কিনেছেন। শুধু এটুকুই জানতেন আজকে কিনলে কালকেই দাম বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু কেন বৃদ্ধি পাবে? যিনি বেশি দাম দিয়ে কিনছেন তিনি আবার কার কাছে আরও বেশি দামে বিক্রি করবেন এবং তিনি কেনেই আবার বেশি দামে কিনবেন? এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা উচিত ছিল। এবং নিজের বাবা-মায়ের তিল তিল করে জমানো টাকা এক নিমেষেই উধাও হয়ে যায়। নিঃস্ব হয়ে পড়েন হাজার হাজার বিনিয়োগকারী।
শুধু শেয়ার বাজার থেকেই যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগ কারীর টাকা উধাও হয়ে গেছে তাই না। কিছুদিন পরপরই শোনা যায় এমন নিঃস্ব হওয়ারর খবর। টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার খবর মিডিয়াতে আসে। আপনি একটি বিষয় মাথায় রাখতে পারেন, রাতারাতি টাকা বৃদ্ধির কোনো সহজ উপায় নেই। এই পর্যন্ত যত জনই প্রচুর অর্থের মালিক হয়েছেন সবাই মেধা, পরিশ্রম, সময়কে গুরুত্ব দিয়েছেন। আপনি ইউটিউবে ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ, আলীবাবাখ্যাত জ্যাক মা, টেসলার ইলন মাস্ক এমন বিশ্বের সেরা ধনী ব্যক্তির কথা শুনুন। তারা কখনোই আপনাকে কোনো শর্ট-কার্ট রাস্তার কথা বলবেন না।
এক ইন্টারভিউতে মার্ক জাকারবার্গ-কে সাংবাদিক বলেছিলেন, আপনি তো অল্প বয়সে রাতারাতি বিশ্বের ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। এ বিষয়ে আপনার অভিব্যক্তি কী? উত্তরে জাকারবার্গ বলেছিলেন, আপনি ঠিকই বলেছেন আমি অল্প বয়সে রাতারাতি বিশ্বের সেরা ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় চলে এসেছি। কিন্তু ওই রাতটা যে কতটা লম্বা এবং গভীর ছিল তা কেবল আমিই জানি, আর কেউ তা জানে না।
বিশ্বের আরেক ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, আমি চাই না কেউ আমার মতো হোক, কারণ এটা খুব পেইনফুল। আপনি যদি আমাকে রাত দুইটার সময়ও ফোন করেন তাহলে আমাকে পাবেন।
আলীবাবাখ্যাত জ্যাক মা বলেছেন, তিনি যখন ডেলিভারি বিজনেস শুরু করেন তখন তিন মাস পর একটি অর্ডার পেয়েছিলেন। এবং তাঁদের আঠারো মাস লেগেছিল বিজনেস শুরু করতে। তাঁরা এই দীর্ঘ সময় অফিসেই ঘুমিয়েছেন। শুধু তাই না, ইলন মাস্ক আরেক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, শুরুর দিকে ইলন মাস্ক এবং তাঁর ভাই মিলে দুজনে কাজ করতেন। কিন্তু তাঁদের কম্পিউটার ছিল মাত্র একটি। রাতে একজন কাজ করতেন এবং দিনে আরেক ভাই কাজ করতেন। এভাবেই তাঁরা শুরু করেছেন।
আপনি জীবনে যে কোনো কিছুই করেন না কেন আপনাকে জানতে হবে। আপনি যত বেশি জানবেন তত ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। প্রায়ই সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন সফল ব্যক্তিদের হাতে বই নিয়ে ছবি পোস্ট করতে দেখবেন। তাঁরা কোনো বইগুলো পড়েছেন তা হাতে নিয়ে পোস্ট করছেন। তাঁরা এটাই বোঝাতে চান, জ্ঞান আহরণের বিকল্প নেই। বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন খাত সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পোর্টফোলিও মেনটেইন করুন ফাইনান্স এক্সপার্টরা পরামর্শ দেন, সমস্ত বিনিয়োগ এক জায়গায় না রেখে বিভিন্ন খাতে রাখতে এতে করে অনেক সুবিধা আছে। যদি কোনো কারণে একটি খাত খারাপ করে তাহলে বাকি খাতগুলো আপনার ওই ক্ষতি পুষিয়ে দেবে। এক সঙ্গে সব খাত খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আরেকটি বিষয় হলো, বিনিয়োগ কখন, কোনো কাজে লাগে তা হয়তো এখন আপনি বুঝতে পারছেন না। কিন্তু ভবিষ্যতে দেখা যাবে নতুন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ কাজে আসবে। আমি পরিবার নিয়ে অস্ট্রেলিয়া আসার আগে ব্যাংক ব্যালেন্স দেখাতে হয়েছিল। আমি স্থাবর সম্পত্তিতে বিনিয়োগের পাশাপাশি অস্থাবর সম্পত্তিতেও বিনিয়োগ করেছিলাম যা তখন আমার কাজে দিয়েছিল।
এক কোটি টাকার বিনিয়োগ খাত
আপনি পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং পরিবার সঞ্চয়পত্র, এই তিন ধরনের সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন। জীবন বিমা/ডাকঘর মেয়াদি হিসাবে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন। ডিপিএস ১০ লাখ টাকা। ট্রেজারি বন্ড বাকি ৩০ লাখ টাকা।
আপনি যদি করদাতা বিনিয়োগকারী হয়ে থাকেন তাহলে ডাকঘর মেয়াদি হিসাবে বিনিয়োগ না করে জীবন বিমা বা ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করুন। কারণ, আপনি ডাকঘর মেয়াদি হিসাবে বিনিয়োগ করলে মুনাফা বেশি পাবেন কিন্তু কর রেয়াত সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। একজন করদাতার এমন বিনিয়োগ খাত নির্বাচন করা উচিত যে খাত থেকে মুনাফার পাশাপাশি কর রেয়াত সুবিধাও পাওয়া যায়। তাহলেই আপনার রিটার্ন সব দিক থেকেই আসবে।
এখানে আপনি একটা প্রশ্ন করতে পারেন, শেয়ার বাজার কেন বিবেচনায় নিইনি। যেহেতু এখানে ঝুঁকির পরিমাণ অনেক বেশি এবং এই খাতে বিনিয়োগ করার জন্য ভালোভাবে জানার দরকার আছে তাই আমি এখানে বিবেচনায় নিইনি। তবে আপনি যদি মনে করেন, এখানে বিনিয়োগ করে আপনি ভালো রিটার্ন পাবেন তাহলে শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারেন। এ ছাড়া, আপনি যদি অনাবাসী বাংলাদেশি হয়ে থাকেন তাহলে সবার প্রথমে তৃতীয় অধ্যায়ে প্রাইজ বন্ড ছাড়া যে তিনটি বন্ড আলোচনা করেছি আগে ওই তিনটি বন্ডে বিনিয়োগ করুন। কারণ, এই তিনটি বন্ড থেকে আপনি যে মুনাফা পাবেন তা সম্পূর্ণ করমুক্ত। একদিকে আপনি বিদেশ থেকে যে টাকা পাঠাচ্ছেন তা সম্পূর্ণ করমুক্ত আরেকদিকে আপনি এই টাকা বিনিয়োগ করে যে মুনাফা পাচ্ছেন তাও সম্পূর্ণ করমুক্ত।
আত্ম-উন্নয়নে বিনিয়োগ করুন
বিনিয়োগ শুধু টাকা বৃদ্ধি নয়। নিজের জ্ঞানকে প্রসারিত করার জন্যও বিনিয়োগ করা উচিত। এবং এটাই হলো সর্বোৎকৃষ্ট বিনিয়োগ। এই বিনিয়োগ পরে আপনার রিটার্ন বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। আপনার সামনে বিভিন্ন পথ খুলে যাবে। বিভিন্ন খাত থেকে আপনার আয় আসতে থাকবে।
আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। যে বাসায় ব্যাচেলর হিসেবে থাকতাম সেখানে প্রথম আলো রাখা হতো। আর আমি নিজের টাকায় সাপ্তাহিক যায়যায়দিন, ইংরেজি সাপ্তাহিক ঢাকা কুরিয়ার, ডেইলি স্টার প্রতি শুক্রবার স্টার ম্যাগাজিন বের করত তা প্রতি শুক্রবার কিনতাম, এবং নীলক্ষেত থেকে কম দামে পুরোনো রিডার্স ডাইজেস্ট কিনতাম। এইগুলো নিয়মিত পরতাম। আর নিয়মিত বিবিসি ইংরেজি নিউজ শুনতাম এবং মোবাইলে বিবিসি, সিএনএন এবং গার্ডিয়ান পত্রিকা পড়তাম। পত্রিকা কেনার জন্য মাসে যে খরচ হতো তা টিউশনির টাকা দিয়ে করতাম। এদিকে কিছু টাকা আবার ব্যাংকেও জমাতাম। তখন যদি কোনো কারণে রিকশায় যাওয়ার দরকার পড় তাহলে তা না করে হেঁটে যেতাম। এতে করে খরচ বেঁচে যেতো। ওই খরচ বাঁচিয়ে এদিকে খরচ করতাম। আর যেহেতু সব বই কিনতে পারতাম না তাই লাইব্রেরির মেম্বার হতাম এবং ওখান থেকে বই নিয়ে এসে পড়তাম। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র অনেক কাজে দিয়েছিল ।
আরেকটা খাতে প্রতি মাসে আমার ভালো টাকা খরচ হতো। আমি তখন অ্যাকাডেমি ফিল্ম সোসাইটি (এএফএস)-তে প্রতি সপ্তাহে মুভি দেখতাম। বিশ্বের সেরা মুভিগুলো এএফএস-এ দেখাত। অস্কার, গোল্ডেন গোব, বাফটা পুরস্কার এবং নমিনেশন পাওয়া মুভি দেখতাম। এই কাজগুলো আমার চিন্তা-চেতনা আমূল বদলে দেয়। এই কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে এখন আমি বাংলা এবং ইংরেজিতে বই লিখতে পারছি, দেশের সেরা পত্রিকাতে আমি কলাম লিখছি। আপনি এখন যাই কিছু করুন না কেন আপনি নিজের উন্নয়নের জন্য প্রতি মাসে কিছু টাকা বরাদ্দ রাখুন। এটা একান্তই আপনার নিজের। যখন দেখবেন ভালো লাগছে না তখন আপনার এই পছন্দের কাজগুলো করুন। দেখবেন আবার সতেজ হয়ে উঠেছেন। নতুন করে আবার কাজ করতে উৎসাহ পাচ্ছেন।
ট্যাক্স সুবিধা কেমন?
আপনি যখন বিনিয়োগ করবেন তখন ট্যাক্স সুবিধা কেমন তা সঞ্চয় ও বিনিয়োগের আগেই দেখে নিন। এখন আপনি বলতে পারেন আমি তো এখন পড়াশোনা করছি। আমি ট্যাক্স রিটার্ন দিইনি। তাই ট্যাক্স-এর বিষয়ে ঝামেলাও নেই। এ জন্য আপনি ট্যাক্স-এর বিষয়টা এড়িয়ে যাবেন না। আপনি ট্যাক্স রিটার্ন না দিলেও আপনাকে ট্যাক্সের বিষয়টা বিবেচনায় নিতে হবে।
ধরুন, আপনি এমন একটি খাতে বিনিয়োগ করেছেন যেখান থেকে আপনি নির্দিষ্ট সময় পর যখন সুদ বা মুনাফা পাচ্ছেন তখন ১০% উৎসে কর কর্তন করে বাকি টাকা পাচ্ছেন। আপনি যদি ১,০০০ টাকা সুদ বা মুনাফা পান তাহলে তা থেকে ১০% হিসেবে ১০০ টাকা কর কর্তন করে বাকি টাকা আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেবে। কিন্তু যদি এমন হতো আপনি ৯০০ টাকার স্থানে কোনো ট্যাক্স না কেটে সম্পূর্ণ ১,০০০ টাকাই পেয়েছেন তাহলে কেমন হয়? তাই আপনি কোনো সময় ট্যাক্স বিষয়টা এড়িয়ে যাবেন না। কারণ, ট্যাক্স আপনার আয় কমিয়ে দেয়। আপনি যখনই কোনো সঞ্চয় বা বিনিয়োগ করবেন তখন অবশ্যই ট্যাক্স সুবিধার বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন।
আর আপনি যদি করদাতা হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয় কর রেয়াত সম্পর্কে জানেন। কর রেয়াত আপনার করদায় বহুলাংশে হ্রাস করে থাকে। কিন্তু এই কর রেয়াত পেতে হলে আয়কর আইন অনুযায়ী আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। আপনি যদি না জেনে কোনো বিনিয়োগ করেন এবং ওই বিনিয়োগ যদি আয়কর আইন অনুযায়ী না হয়। তাহলে কিন্তু কর রেয়াত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। আপনি বিনিয়োগ ঠিকই করেছেন। কিন্তু না জানার কারণে কর রেয়াত সুবিধা পাননি এবং এ জন্য বাড়তি ট্যাক্স দিতে হলো। আপনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন। আবার এমন কিছু খাত আছে, যে খাতগুলোতে আপনি বিনিয়োগ করে কর রেয়াত নেওয়ার পাশাপাশি ট্যাক্সের পরিমাণও কমাতে পারেন।
কিছু সতর্কতা
আপনি এখন বিনিয়োগের ওপর যে রিটার্ন আশা করছেন তা যে কোনো সময় কমতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক মন্দা, অজানা অর্থনৈতিক দুর্যোগ আসতে পারে। এই সব কারণে আপনার রিটার্ন বিঘ্নিত হতে পারে। আর তাই বিশেষজ্ঞরা প্রতি বছর আগের বছরের চেয়ে ৩% বেশি করে সেভিংস এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর সঠিক প্ল্যান থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব না। আপনি যদি জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালিত করেন এবং লক্ষ্যে অবিচল থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার লক্ষ্যে পৌঁছে যাবেন। আপনি এখান থেকে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেলেন।